বালুরঘাট ও রায়গঞ্জ: অনেক সময় রাস্তাঘাটে পথপশুদের নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ ওঠে। তাদের দ্বারা দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে আক্রমণের কথাও শোনা যায়। এবার পথপশুদের অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার রোধ করতে পদক্ষেপ করল পশু চিকিৎসকরা।
রবিবার রাস্তায় থাকা সারমেয় সহ একাধিক পথপশুর নির্বীজকরণের উদ্যোগ নেওয়া হল বালুরঘাটে (Balurghat)। পশ্চিমবঙ্গ ভেটেনারি অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশনের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কমিটির তরফে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আগামীতে পাড়ায় পাড়ায় এই উদ্যোগ চলবে বলে জানালেন পশুপ্রেমীরা।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ব্লকের লাইভ স্টক ডেভেলপমেন্ট অফিসার সহ উদ্যোক্তা সংস্থার পদাধিকারী ও শল্য চিকিৎসক পলাশ হাঁসদা।
রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো সারমেয়দের জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হয় স্থানীয় পুরসভা থেকে প্রশাসনের। যদিও প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে মাঝেমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তা সীমিত। ফলে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাস্তায় পথপশুদের সংখ্যা বেড়ে যায়।
আগে বিভিন্ন রাজ্যে পথপশুদের মৃত্যুর সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে হয়েছে। কিন্তু এখন তাদের নির্বীজকরণ করলেই জন্মহার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে সেই প্রক্রিয়ার খরচ যথেষ্ট ব্যয়বহুল।
একটি পুরুষ সারমেয়কে নির্বীজকরণ করলে গড়ে ৩৫০০ টাকা খরচ রয়েছে। এরপর যত্ন ও এন্টি ব্যাকটিরিয়াল চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে এদিন বালুরঘাট প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্বীজকরণ প্রক্রিয়া বিনামূল্যে করা হয়েছে। পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করতে ২০০ টির ওপরে পথপুকুরদের অ্যান্টি রেবিস টিকা দেওয়া হয়েছে।
বালুরঘাটের পশুপ্রেমী ব্রতীন চক্রবর্তী বলেন, ‘এদিন অনেক পথকুকুরদের নিয়ে গিয়ে আমি জলাতঙ্ক রোগ আটকাতে টিকা করিয়ে নিয়ে এসেছি। এই উদ্যোগের ফলে অনেক উপকার হয়েছে। তারা বিনামূল্যে নির্বীজকরণ করিয়েছে। শুধু ১০০ টাকা দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে।’ পশু চিকিৎসক সংগঠনের জেলা সম্পাদক ডঃ আজগর আলি মণ্ডল বললেন, ‘এদিন প্রায় ২০০ টি পথপশুদের অ্যান্টি রেবিস টিকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য পৃথিবী থেকে জলাতঙ্ক রোগ দূর করা। এজন্য অনিয়ন্ত্রিত জন্ম রোধ প্রয়োজন। এদিন ছয়টি পথকুকুরদের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে। এতে আগামীতে তাদের জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’
অন্যদিকে, পথকুকুরদের টিকাকরণ ও নির্বীজকরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হল রায়গঞ্জে (Raiganj)। রবিবার ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটেনারি অ্যালুমিনি অ্যাসোসিয়েশন এবং চতুর্থ আরক্ষা বাহিনীর উদ্যোগে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তবে এদিনের কর্মসূচিতে উত্তর দিনাজপুর পিপল ফর অ্যানিমালস, রায়গঞ্জ পিপল ফর অ্যানিমালস এবং কাইন্ডনেস অ্যান্ড কেয়ার টু অ্যানিমালস সোশ্যাল ট্রাস্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও অংশ নেয়। ২০ টি পথকুকুরের নির্বীজকরণ করা হয়। সেইসঙ্গে টিকাকরণ কর্মসূচি চলে।
ডিস্ট্রিক্ট ভেটেনারি অফিসার দিবেন্দু বিকাশ কর্মকার বলেন, ‘পথকুকুরের কামড়ে যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে রোগজীবাণু ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এই টিকাকরণ। পাশাপাশি সারমেয়দের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বীজকরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল।’