সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: একটি প্রাথমিক স্কুলে নথিভুক্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩৯। কিন্তু গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জনের বেশি পড়ুয়াকে স্কুলে পাওয়া যায় না। শুধু বালুরঘাট (Balurghat) শহরতলির এই স্কুল নয়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যেকটি স্কুলের ছবি একই। সরকারি খাতায় নাম থাকলেও, এমন প্রচুর ছেলেমেয়ে রয়েছে, যারা স্কুলের পথে পা বাড়ায় না। কেউ পরিযায়ী শ্রমিক বাবার সঙ্গে ভিনরাজ্যে থাকে, কেউ আবার স্থানীয় স্তরে কাজ জোগাড় করে নিয়েছে পরিবারের কোনও সদস্যর সঙ্গে অথচ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, ২০২৩-’২৪ শিক্ষাবর্ষে এইরাজ্যে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চপ্রাথমিক স্তর পর্যন্ত স্কুলছুট হয়নি কোনও পড়ুয়া। ফলে ওই রিপোর্ট এবং বাস্তবের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এমন পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, ‘কেন্দ্র সরকারের প্ল্যাটফর্মগুলিতে বা নির্দিষ্ট পোর্টালে বিভিন্ন রাজ্য সঠিক তথ্য আপলোড করলেও, তা করে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের সরকার তথ্য গোপন করে। একসময় অমর্ত্য সেনের একটি সংস্থা সঠিক তথ্য তুলে ধরেছিল। ড্রপআউট আছে বলেই আগের মতো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ফর্ম তোলার লাইন পড়ে না। এখন ছাত্রই ভর্তি হচ্ছে না।’
কাগজে-কলমে স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্য হলেও, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিল নেই দক্ষিণ দিনাজপুরে। যেমন চিঙ্গিসপুরের বাসিন্দা শ্যামলাল মাহাতোর ছেলে ও মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা করত। গত মার্চ মাসে ওই পরিবারটি ভিনরাজ্যে কাজ করতে চলে গিয়েছে। ফলে ওই শিশুদের পড়াশোনা বন্ধ। কিন্তু ওই দুই শিশু যেহেতু একসময় স্কুলে এসেছিল, তাই সেই তথ্যকে হাতিয়ার করে রিপোর্ট কার্ড তৈরি হয়েছে, বলছেন অনেক শিক্ষক। তাঁদের বক্তব্য, কোনও ছাত্রকে স্কুলছুট নয়, বরং বলা হচ্ছে মরশুমি স্কুলছুট। এবিপিটিএ জেলা সম্পাদক শংকর ঘোষ বলছেন, ‘স্কুলছুট শূন্য দেখানো, আদতে তথ্য গোপনের চেষ্টা করা। কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কারণে অনেক শিশুকেই স্কুলে পাঠাতে পারছেন না অভিভাবকরা। পাশাপাশি, বর্তমান যে পাঠক্রম তা বিজ্ঞানসম্মত নয় বলেই অনেক অভিভাবক সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। নানা কারণে স্কুলছুটের নজির রয়েছে। কিন্তু শূন্য দেখানোর তাৎপর্য, কোনওকিছুকে লুকিয়ে রাখা।’
এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে সমগ্র শিক্ষা মিশন। যে কারণে শিক্ষক এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের সাহায্যে কোন শিশু দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসছে না, তার তথ্য সংগ্রহে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কাজের জন্য কোনও পরিবার শিশু সহ বাইরে চলে যেতে পারে, সতর্কতামূলক প্রক্রিয়ায় সেই তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জেলা শিক্ষা আধিকারিক বিমলকৃষ্ণ গায়েনের বক্তব্য, ‘কোনও ছাত্রই যাতে স্কুলছুট হতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করা হবে এই প্রক্রিয়ায়। পাশাপাশি, শিক্ষার মান যাচাইয়ে স্কুলগুলি পরিদর্শন করবে একটি প্রতিনিধিদল।’