আলিপুরদুয়ার: পয়লা বৈশাখে কেবল নতুন জামা পরলেই হবে না, পরতে হবে নতুন গয়নাও। আর সেটাও আবার যে সে গয়না নয়, তাতে থাকতে হবে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া।
গয়নায় বাঙালিয়ানা! সে আবার কী? যতটা অবাক হয়ে এই প্রশ্ন করা, উত্তর দিতে গিয়ে তার থেকেও বেশি অবাক হলেন সায়ন্তনী আমিন। আলিপুরদুয়ার শহরের এই তরুণীর নৃত্যশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে। নাচের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য নানা ধরনের গয়নার প্রয়োজন পড়ে তাঁর। জানালেন, কানের দুলে একটুকরো গামছার ছোঁয়া থেকে শুরু করে স্বস্তিকা চিহ্নের লকেট, বাঙালিয়ানা এখন আর কেবল মননে নয়, পরনেও। আলিপুরদুয়ার শহরে এমন নতুন ধরনের গয়না বানান ও বিক্রি করেন একাধিক মহিলা শিল্পী। খোঁজখবর করতে গিয়ে নাম উঠে এল বর্ষা পাল, পাপিয়া বাছারদের। এককথায় জানালেন, নতুন প্রজন্মের কাছে এমন স্টাইলের গয়নার কদরই আলাদা।
নিজেকে গয়নাশিল্পী বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন বর্ষা। বললেন, ‘পয়লা বৈশাখ মানেই শুভারম্ভ। তাই স্বস্তিকা চিহ্ন দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের গয়নার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শুদ্ধতার প্রতীক এই চিহ্নকে নিয়ে তৈরি গয়নার প্রতি আলাদা আকর্ষণ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে।’ হাতে বানানো নানা ধরনের দুলও বিক্রি করছেন তিনি। দাম শুরু ৩০ টাকা থেকে। বর্ষার দাবি, অনেক ক্রেতা নাকি একটা কিনতে এসে একেবারে চার-পাঁচটা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ছোট কুলোর মধ্যে মাটি দিয়ে তৈরি করা ধান-দূর্বা, শাখা-পলা, পদ্ম ফুলের কুঁড়ি। সেই কুলো আসলে গলায় পরার লকেট। পাপিয়ার ভাবনায় এভাবেই উঠে এসেছে বাঙালির নিজস্ব পরিচয়। লকেট হিসেবে মাটির তৈরি ছোট্ট গণেশের চাহিদাও যথেষ্ট। পাপিয়া জানালেন, এসব গয়নার দাম ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। ‘চাহিদা এত বেশি যে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে।’ তাঁর গলায় ঝরে পড়ে আত্মবিশ্বাস।
বছরের শুরুটা অনেকেই চান সিদ্ধিদাতার আশীর্বাদ নিয়ে শুরু করতে। তাই লকেট হিসেবে গণেশের জনপ্রিয়তা তো থাকবেই। বলছিলেন পূজা মণ্ডল। তরুণী এই শিক্ষিকার কথায়, ‘পয়লা বৈশাখের সাজ একটু অন্যরকম তো হতেই হবে।’ এত গেল বিভিন্ন মোটিফের ব্যবহার। আলিপুরদুয়ার শহরে আরেকটি কায়দাও এখন ট্রেন্ডিং। তা হল নিজের পোশাকের একটা অংশ দিয়ে গয়না বানানো। শিল্পী প্রিয়স্মিতা সরস্বতী বলছিলেন, ‘অনেকে নিজের শাড়ি থেকে অল্প কাপড় কেটে দিয়ে দেন। যাতে সেখান থেকেই ম্যাচিং গয়না তৈরি করা যায়। এতে পুরো লুকটা হয়ে ওঠে একেবারে পারফেক্ট।’ শুধু কাপড় নয়, কড়ি দিয়ে, পাট দিয়ে করা নানা ডিজাইনের প্রতিও আগ্রহ বেড়েছে নতুন প্রজন্মের। শাড়ির রং, ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেব্রিক দিয়ে হাতের, কানের, গলার গয়না তৈরি করেন দেবযানী মিশ্রও। জানালেন, গামছা প্যাটার্নের ওপর তৈরি গয়না এখন খুবই জনপ্রিয়। লাল-সাদা শাড়ির সঙ্গে চমৎকার মানায় এই গয়না।
এই পরিবেশবান্ধব ও ট্রেন্ডি গয়নার কদর কি কেবলই আধুনিক প্রজন্মের কাছে? এই ‘স্বতঃসিদ্ধান্ত’ মানতে নারাজ অঙ্কনা মালাকার। মধ্যবয়সি এই বাচিকশিল্পীর কথায়, ‘শুধু শাড়ি বা পোশাক দিয়ে বৈশাখী সাজ সম্পূর্ণ হয় না। সেই সাজ হৃদয়ের ভাষা খুঁজে পায় প্রিয় গয়নায়। আর মনের কাছাকাছি থাকা নববর্ষের সাজ যে অন্যরকম হবে, তা বলাই বাহুল্য।’