ঢাকা: পদত্যাগপত্র লিখেও থমকে গেলেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি আমেরিকাগামী বিমানে উঠে পড়বেন বলে জল্পনা ছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকে। বদলে শুক্রবার মাঠে নেমে পড়লেন ইউনূস সমর্থকরা। তাঁদের ডাকে শনিবার ‘মার্চ ফর ইউনূস’ অভিযান হবে বাংলাদেশের (Bangladesh) ঢাকায় (Dhaka)। শাহবাগে ওই জমায়েতের জন্য ঢাকা পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে শুক্রবার।
মূলত দুটি দাবি ওই অভিযানের। প্রথমত, ইউনূসকে অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন পরে, আগে সংস্কার করতে হবে। অথচ সেনাবাহিনী থেকে বিএনপি, দ্রুত নির্বাচন করানোর জন্য চাপ তৈরি করছিল অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। সংস্কারের ব্যাপারেও অন্তর্বর্তী সরকারের এক্তিয়ার খুব সীমিত বলে মন্তব্য করেছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করাতে হবে, বলেছিলেন গত মঙ্গলবার।
শুক্রবার সেই সেনাপ্রধানকেই সরিয়ে দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্দরে। ১০ জুনের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে সেই ঘোষণাপত্র মেনে সংবিধান স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে। সেই সুযোগে একসঙ্গে অপসারণ করা হতে পারে রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানকে। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতারা প্রথম থেকেই রাষ্ট্রপতিকে সরানোর পক্ষে ছিলেন। সেই তালিকায় এখন যোগ হল ওয়াকারের নাম।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার যমুনা ভবনে বৈঠক করার পর ইউনূসের ইস্তফার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শুক্রবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ফেসবুক পোস্টে তিনি পুরো বিষয়টির জন্য ভারতকে নিশানা করেন। তিনি লেখেন, ‘দিল্লি থেকে ছক আঁকা হচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীল করার। গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে।’
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকে বলছেন, ইউনূসের পদত্যাগের জল্পনা ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল চিত্রনাট্য মেনে। বিএনপি অবশ্য বৃহস্পতিবারই দাবি করেছিল, এর পিছনে নাটক আছে। আওয়ামী লিগের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ শুক্রবার দেশের একটি বেসরকারি চ্যানেলে বলেন, ‘আমরা ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করিনি। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার বদলে উনি ইস্তফা দিতে চাইলে সেটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’
যদিও তাঁর বক্তব্য, ‘একান্তই উনি দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। বিকল্প খুঁজে নেবে।’ শুক্রবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ইউনূসকে পদত্যাগ করতে দেবেন না তাঁর অনুগতরা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়াব ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘তাঁর ক্ষমতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের দরকার আছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস নিজে কোনও মন্তব্য না করলেও সরকারের অবস্থান শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন আরেক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু নির্বাচন করা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। প্রধান উপদেষ্টা সময় দিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ওই সময়সীমার একদিনও এদিক-ওদিক হবে না। তবে শুধু সেটাই আমাদের দায়িত্ব নয়।’
ইউনূসের আস্থাভাজন রিজওয়ানার বক্তব্য, নির্বাচন ছাড়া আরও দুটি দায়িত্ব আছে তাঁদের কাঁধে। একটি সংস্কার, অন্যটি বিচার। জামায়াতে ইসলামিও ইউনূসের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এই দলটির আমির শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবার ইউনূসের পদত্যাগ চর্চার মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদল বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করেছিলেন। শুক্রবার তিনি সরাসরি বলেন, ‘ইউনূস থাকুন। সব দলের সঙ্গে কথা বলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন।’ তিনি বরং সেনাপ্রধানকে উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।