দীপেন রায়, মেখলিগঞ্জ: শুক্রবার মেখলিগঞ্জের (Mekhliganj) কুচলিবাড়ি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বাধা দিয়েছিল বিজিবি। শনিবার বাগডোকরা–ফুলকাডাবরির কাংড়াতলি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরে ঢুকে প্রায় ২ হাজার চা গাছ নষ্ট করেছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা (Bangladeshi miscreants)। একইসঙ্গে তামাকখেতও নষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ঘেঘিরবাড়ি চা বাগানের গাছ নষ্ট করার পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের চা বাগানও নষ্ট করেছে দুষ্কৃতীরা। ওই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট কোথাও কোথাও এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে৷ বিএসএফ জওয়ানরা কাঁটাতারের এপারে ডিউটি করেন। সেদিক থেকে ঘন কুয়াশা ও অন্ধকারের সুযোগে ভারতের সীমানা পেরিয়ে এপাশে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। বিএসএফ অবশ্য কাঁটাতারের ভিতরে থাকা কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শনিবার ওই এলাকায় কাঁটাতারের ভেতরে তিনটি সোলার লাইট লাগানো হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে কাঁটাতারের ভেতরেও বিএসএফ জওয়ানরা ডিউটি করবেন।
স্থানীয়দের দাবি, এমনটা এর আগে হয়নি। বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের পর সীমান্তে কড়াকড়ি হয়েছে। কমেছে পাচার। সেই কারণে বাংলাদেশি পাচারকারীরা এমনটা করছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্য প্রান্তে খোলা সীমান্তে কৃষকরা অস্থায়ী বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। বিএসএফ সোলার লাইট লাগানোর কাজ করছে। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা প্রতিশোধমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ। ঘেঘিরবাড়ি চা বাগানের ম্যানেজার নকুল রায় বলেন, ‘আমাদের চা বাগান সহ পার্শ্ববর্তী কৃষকদের প্রায় ২ হাজার চা গাছ নষ্ট করেছে। আমরা বিএসএফের দ্বারস্থ হয়েছি।’
ওই চা বাগানের বেশিরভাগটাই কাঁটাতারের ভিতরে অর্থাৎ বাংলাদেশের দিকে। সেদিকে বাকি চা বাগানের গাছও নষ্ট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এতে মালিক সমস্যায় তো পড়বেনই, চা বাগান বন্ধ হয়ে গেলে তার থেকে বেশি সমস্যায় পড়বেন চা বাগানের উপর নির্ভর করা মঙ্গলু বর্মন, সাঁতারু রায়, বিষাদু রায়ের মতো প্রায় শতাধিক শ্রমিক। মঙ্গলু বলেন, ‘আমরা চা বাগানে কাজ করেই সংসার চালাই। তাই চা বাগান নষ্ট হয়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যাব।’
চা বাগানের সঙ্গে তামাক গাছও ক্ষতি করেছে দুষ্কৃতীরা। সঞ্জিত রায় নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমার প্রায় সব জমি কাঁটাতারের ভিতরে। জমির সমস্ত তামাক গাছ নষ্ট করে দিলে সমস্যায় পড়ে যাব।’ স্থানীয় কৃষকরা চাইছেন, বিএসএফ কাঁটাতারের ভিতরেও ডিউটি করুক। স্থানীয় মনতোষ রায় নামে এক কৃষক বলেন, ‘আগে বাংলাদেশিরা এরকম আচরণ করেনি। সেদেশের সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর এরকম ক্ষতি শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেই মাত্রা বেড়েছে।’
বাগডোকরা-ফুলকাডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৫ খরখরিয়া এলাকায় শুক্রবার কৃষকরা ফসল বাঁচাতে নিজেদের উদ্যোগে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়েছেন। এনিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল সীমান্ত এলাকা। এদিন দেখা গেল, ওই সীমান্তে বিএসএফের কড়া নিরাপত্তা রয়েছে। বাংলাদেশের দিকেও বিজিবি’র তৎপরতাও লক্ষ করা গিয়েছে। এদিন অবশ্য নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া লাগাননি কৃষকরা। অনুপ রায় নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমরা নিজেরা প্রায় ১ লক্ষ টাকার কাঁটাতার কিনেছি। তা দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। আবার কাঁটাতারের বেড়া এনে বাকি খোলা সীমান্তেও বেড়া দেওয়া হবে। এদিন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় বলেন, ‘বিজিবি বা বাংলাদেশিরা যতই বাধা দিক, খোলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবেই।’