সৌরভ রায়, হরিরামপুর: ডাইনি সন্দেহে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে মারধর। ওঝার কেরামতিতে প্রাণ গেল অষ্টাদশী নববধূর(Bride)। জানা গিয়েছে, মৃত বধূর নাম বাসন্তী হেমব্রম। ছয় মাস আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। কিছুদিন আগে বাপের বাড়ি থেকে ঘুরেও আসেন তিনি। শ্বশুর বাড়িতে ফেরার পরই নাকি নববধূর মধ্যে কিছু অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। সেই কারণে তাঁকে ওঝার বাড়ি নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেই ওঝা জলপড়া, লোহার রড দিয়ে গা ঝাড়া, সবই করে। অভিযোগ, এতেই মৃত্যু হয় ১৮ বছরের বাসন্তীর। ঘটনার কথা জানতে পেরেই হরিরামপুর(Harirampur) থানার পুলিশ ওঝা, স্বামী সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গিয়েছে, ৬ মাস আগে হরিরামপুর ব্লকের মেয়ে বাসন্তী হেমব্রমের সঙ্গে মোল্লাপুকুর গ্রামের শ্রীনাথ হাঁসদার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই অশান্তি শুরু হয়। মৃতার বাবা বুধু হেমব্রম বলেন, ‘মেয়ে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতেই স্বামী ও শ্বাশুড়ির কাছে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। এরপর ২৭ মে জামাই ফোনে জানায়, বাসন্তীর শরীরে প্রেতাত্মা বা ডাইনি ভর করেছে। তাই তারা বংশীহারী ব্লকের নীলগম্ভীর গ্রামের ওঝা ছানু মুর্মুর কাছে বাসন্তীকে নিয়ে যায়। কিন্তু সে ঠিক হয়নি। এরপর ওঝা ডাইনি তাড়ানোর নামে লোহার জিনিস দিয়ে মেয়েকে অমানষিক শারীরিক নির্যাতন করে। মেয়ে অচৈতন্য অবস্থায় মেঝেতে পড়েছিল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেয় জামাই ও তার মা সুখি হেমব্রম। তারা সেই ওঝার কাছেই জল ঢালার পরামর্শ দিচ্ছিল। সব বাধা কাটিয়ে মেয়েকে রায়গঞ্জ মেডিকেলে ভর্তি করি। বৃহস্পতিবার ভোরে বাসন্তী মারা যায়।’
অন্যদিকে, অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করেছে হরিরামপুর থানার পুলিশ। জামাই শ্রীনাথ হাঁসদা, মা সুখি হেমব্রম, কাকা সামিয়েল হাঁসদা সহ ওঝা ছানু মুর্মুকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আইসি অভিষেক তালুকদার।
এই প্রসঙ্গে এক শিক্ষক দুর্গা সোরেন বলেন, ‘ওঝা, ডাইনি, জল ঢালার মতো কুসংস্কারের বলি হল মেয়েটি। শুধু মারধর নয়, গোটা শরীরে কামড়ের চিহ্নও রয়েছে। দৃষ্টান্তমূকল শাস্তি দেওয়া হোক।’
আদিবাসী সমাজসংস্কারক ও লেখক মুচিয়া হাঁসদা বলেন, ‘এই অবস্থার উন্নতি করতে প্রশাসনের উচিত আদিবাসী মানুষজনকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে সমস্ত আদিবাসী পাড়ায় সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত। এছাড়া এই ব্যাধি নির্মূল হবে না।’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের জেলা সম্পাদক অনিমেষ লাহিড়ি জানান, সচেতনতার অভাবেই এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে।