সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রস্তাব যতই জমা পড়ুক, লগ্নির আশ্বাস মিলুক, উত্তরবঙ্গে যে চিমনির থেকে ধোঁয়া উঠবে না, তা পরিষ্কার। আর এমন স্পষ্ট বার্তা পেয়ে পর্যটনশিল্পের ওপরই জোর দিচ্ছে এখানকার শিল্প-বাণিজ্য সংগঠনগুলি। বুধবার কলকাতায় শুরু হচ্ছে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (Bengal Global Business Summit)। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে চাঁদের হাট বসবে। আর এখানেই ‘পর্যটনে উত্তরবঙ্গ’ তুলে ধরার চেষ্টা হবে। এমন মঞ্চ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এইচএইচটিডিএন) তো বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরার চেষ্টা করবে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে পর্যটনকে ফোকাস করতে চাইছে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) এবং কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজও (সিআইআই)। যাতে স্পষ্ট উত্তরের ‘লাইফলাইন’ পর্যটনই।
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে (BGBS) নজর উত্তরবঙ্গেরও (North Bengal)। এখানকার আট জেলার জন্য সম্মেলনে কী প্রস্তাব জমা পড়ে, রাজ্য সরকারের ভাবনা কী, তা যেমন জানতে চাইছে উত্তরবঙ্গ, তেমনই সুযোগ মিললে উন্নয়নে তাদের ভাবনা এবং চাহিদাও তুলে ধরবে বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন সংগঠন। যদিও বুধবার সম্মেলনের উদ্বোধনের দিন সেই সুযোগ না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বৃহস্পতিবার একাধিক সেক্টর বৈঠকে মিলতে পারে প্রস্তাব জমা দেওয়া এবং প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরার। বর্তমানে উত্তরের অর্থনীতির জিয়নকাঠি পর্যটন। যে কারণে রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ধর্মীয়, ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ট্যুরিজম সার্কিট গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে। যা উল্লেখ করে এইচএইচটিডিএনের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলছেন, ‘উত্তরবঙ্গ নিয়ে রাজ্যের নতুন চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা বুধবার কিছুটা হলেও জানা যাবে বলে আশা করছি। সুযোগ মিললে বৃহস্পতিবার সেক্টর বৈঠকে এখানকার হোমস্টের আরও উন্নতির কথা তুলে ধরব। পর্যটক এল, থাকল এবং চলে গেল তা নয়, আমরা চাইছি পর্যটকের সঙ্গে লোকাল কমিউনিটির যোগাযোগ স্থাপন। পাশাপাশি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, বার্ড ওয়াচিং গাইড প্রশিক্ষণের কথাও বলব। উৎকৃষ্ট পর্যটন চাইছি আমরা।’
জমির সমস্যা না থাকলেও নানা কারণে উত্তরবঙ্গে বড় কলকারখানার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান না শিল্পপতিরা। পাশাপাশি, বিস্তর সম্ভাবনা থাকলেও নতুন করে আর ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্পেও (এমএসএমই) বিনিয়োগ হচ্ছে না। যেকারণে আইসিসি, সিআইআইয়ের মতন সংগঠনগুলিও পাখির চোখ করেছে পর্যটনকে। যা স্পষ্ট হয় আইসিসির উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান উমং মিত্তালের বক্তব্যে। তিনি বলছেন, ‘এমএসএমইতেও ভালো কাজ হচ্ছে। বিনিয়োগ হচ্ছে রিয়েল এস্টেটে। তবে ট্যুরিজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে হসপিটালিটি। পর্যটনের জন্য মূলত স্বাস্থ্য এবং হোটেলের ক্ষেত্রে নজর পড়ছে। পর্যটন ক্ষেত্রকে আরও কীভাবে উন্নতি করা যায়, সেই সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব দেওয়ার ইচ্ছে আছে।’ সংগঠন সদস্য কিছু বিনিয়োগকারী বুধবার লগ্নি প্রস্তাব দেবেন বলে তিনি জানান। সিআইআইয়ের উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান নরেন্দ্র গর্গ বলছেন, ‘উদ্বোধনের দিন প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে না। ওইদিন আমরা সমস্ত কিছু শুনব। সুযোগ পেলে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে পর্যটন সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব তুলে ধরব।’