রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

Bilaspur Nilkuthi | হেরিটেজ তকমাই সার, রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীন প্রশাসন

শেষ আপডেট:

বিশ্বজিৎ সরকার, বিলাসপুর: বছর দশেক আগে মিলেছিল হেরিটেজ তকমা। তারপর শুধুমাত্র কিছু লোক দেখানো সংস্কার হয়েছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। অথচ হেরিটেজ তকমা পাওয়া এই নীলকুঠি ঘিরে গড়ে উঠতে পারত পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু হয়নি কিছুই। করণদিঘির সাবধান গ্রামের একপ্রান্তে কার্যত অবহেলায় পড়ে রয়েছে ওই নীলকুঠিটি।

করণদিঘি ব্লকের লহুতারা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস থেকে হাঁটা পথে মাত্র ত্রিশ মিনিট। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম সাবধান। শ’দুয়েক আদিবাসী পরিবারের বাস। চারদিকে বাঁশবাগান। মাঝে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল নীল উৎপাদনের সুবন্দোবস্ত। পাশেই নীলকুঠি। এলাকাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নীলকুঠি নামেই বেশি পরিচিত। গেলেই দেখা যাবে, অবহেলায় পড়ে আছে ব্রিটিশ যুগের প্রায় ২০০ বর্গমিটার আয়তনের কংক্রিটের উনুন।

ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে অনেকদিন আগে। রয়ে গিয়েছে স্মৃতি আর একটি নীলকুঠি। প্রায় তিনশো বছর আগে দেশের অন্য প্রান্তের সঙ্গে নীল চাষের সূত্রপাত তৎকালীন বিহারের সাবধান এলাকায় শুরু হয় জুলুম প্রতিবাদে কৃষক বিদ্রোহ আজ ও সেদিনের স্মৃতি এলাকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে। ইতিহাসের গবেষক বৃন্দাবন ঘোষের মতে, ‘করণদিঘি সাবধান এলাকায় নীল উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল। ওই সময়ের উনুন এখনও সেখানে রয়েছে। যা ঐতিহাসিক উপাদান।’

সাবধান গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে মুখে আজও ঘুরে বেড়ায়, এখানে উনুনের আগুনে ফুটিয়ে নীল তৈরি করে বাজারে বিক্রি হত। ঘোড়ার পিঠে বিভিন্ন এলাকার নীল জমা হত কুঠির চত্বরে। ঘোড়া না থাকলেও আস্তাবল আজও রয়েছে নীলকুঠির পাশে। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নাগর নদী। উত্তর-পূর্ব দিকে সহিদপুর হয়ে ঢিমেতালে তা চলে গিয়েছে বাংলাদেশে।

নদীপথেও নীল আসত কুঠিতে। কংক্রিটের যে ছয়টি ঘরে ব্রিটিশ কর্মচারীরা থাকতেন সেটা অক্ষত রয়েছে কুঠিবাড়িতে। এলাকার বাসিন্দা রবিন মুর্মু বলেন, ‘এত বড় ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনও সরকারই এই গ্রামকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসেনি। বাবার মুখে শুনেছি, ঠাকুরদা ও তাঁর বাবা, কাকারা বিনা পারিশ্রমিকে নীল উৎপাদনে বাধ্য হয়েছিলেন। নির্মম অত্যাচার চলেছে তাঁদের ওপর।’

ছেলে থেকে বুড়ো প্রত্যেকের মুখে ফেরে সেদিনের নীল চাষের রকমারি গল্প। যেমন বছর দশেকের ক্ষুদিরাম মুর্মু নীলকুঠির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়ায়। আঙুল উঁচিয়ে জানায়, ‘ওই চুল্লিতে নীল ফোটাতে দেওয়া হত। বাবা, ঠাকুরদারা জানিয়েছেন আমাকে।’ শুধুমাত্র রবিন অথবা ক্ষুদিরাম নয়, ঘরে ঘরে একই গল্প। সেদিনের রকমারি স্মৃতি। তবে নীল বিদ্রোহের আঁচ এখানে কতটা পড়েছিল সেটা জানার উপায় নেই। কারণ, বলার লোক নেই। এখন বিকেলে অনেকেই নীলকুঠির উদ্যানে বেড়াতে আসেন, অতীতকে ফিরে দেখার চেষ্টাও চলে।

সেদিনের নীলচাষিদের কেউ জীবিত না থাকলেও এদিক-ওদিক ঢুঁ মারতে মিলে যায় তাঁদের বংশধরদের। যেমন যতেন মুর্মু। বছর পঞ্চাশের যতেন পেশায় প্রান্তিক কৃষক। তাঁর আফসোস, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার যদি নীলকুঠিকে পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে যেতে পারত, তাহলে গ্রামটাই বদলে যেত। তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি ঠাকুরদার বাবা একসময় নীল চাষ করতেন। অনেক অত্যাচার সইতে হয়েছে। কোনওমতে প্রাণ রক্ষা করেছেন।’

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

Jalpaiguri | নাচে জাতীয় স্কলারশিপ পেল দুই কন্যা

অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়িকে গর্বিত করল দুই কিশোরী (Jalpaiguri)।...

Kaliachak | একসঙ্গে পরিবারের চার সদস্যকে খুন! দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত

মালদা: একই সঙ্গে বাবা, মা, বোন, ঠাকুরমাকে খুন করে...

Kaliachak | পুলিশি অভিযানে উদ্ধার কোটি টাকার ব্রাউন সুগার! ধৃত ২

কালিয়াচক: প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ব্রাউন সুগার সহ ২...

John Barla | ‘রাজ্যের ১০০ দিনের টাকা আটকেছে কেন্দ্র, সব জানাবো’, ডুয়ার্সে ফিরেই বিজেপিকে নিশানা বারলার

নাগরাকাটা: কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে এরাজ্যের ১০০ দিনের টাকা আটকেছে,...