দিলীপকুমার তালুকদার: প্রায় দেড় বছর বাদে অনেক চেষ্টার পর অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি পেলেন বিরাট কোহলি। আর বুনিয়াদপুর পুরসভার মাঠ খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা জগৎতারা রানি বিশ্বাস কি না অনায়াসে একশোর কোঠা পেরিয়ে গেলেন। সেই আনন্দে তাঁর চার নাতি জীবন, ধনঞ্জয়, চিরঞ্জিত এবং রুদ্ররা সিদ্ধান্ত নেন, ঠাকুরমার অন্নপ্রাশন করা হবে। একশো বছরে অন্নপ্রাশন! অবশ্য হবে নাই বা কেন। কয়েকদিন আগে তার মাড়িতে দুটি দাঁতও গজিয়েছে যে।
শতবর্ষীয় বৃদ্ধার সেই অন্নপ্রাশনকে ঘিরে শুক্রবার বেজায় উৎসাহ শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের মাঠ খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। বেশ ধুমধাম করে জগৎতারার অন্নপ্রাশনের আয়োজন করেছিলেন নাতিরা। জানা গেছে, জগৎতারা বিশ্বাস সদ্য ১০০ বছর পার হওয়ার পরে বাড়ির লোকজন খেয়াল করেন, কয়েকদিন আগে তাঁর দুটি দাঁত গজিয়েছে। এরপরে ঠাকুরমার অন্নপ্রাশন আয়োজনের চার নাতির সিদ্ধান্তকে বেশ আনন্দের সাথে স্বাগত জানান তঁার তিন ছেলে এবং বিবাহিতা মেয়েরা।
শুক্রবার দুপুরে জগৎতারার মুখে ভাত উপলক্ষ্যে তাঁর ছোট ছেলে দিলীপ বিশ্বাসের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, এলাকার প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের ভিড়ে রীতিমতো উৎসবের চেহারা নিয়েছে। বাড়িতে বাজনা বাজছে। মুখে ভাত অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শুরু হল ভোজ। দুপুর দেড়টা নাগাদ উলুধ্বনির এবং শঙ্খধ্বনির মধ্যে বৃদ্ধার মুখে পায়েস এবং ভাত তুলে দেন ভাগ্নে বিশ্বজিৎ। একে একে তিন ছেলে, ছেলেদের স্ত্রী এবং তিন মেয়ে তাদের মাকে প্রণাম করেন। তারপর শুরু হয় ভোজের আয়োজন। খাবারে ছিল সাদা ভাত, দু’রকমের ডাল, বাঁধাকপির ঘণ্ট, মাছ, পাঁপড়, দই, মিষ্টি। শতায়ু বৃদ্ধার অন্নপ্রাশনে নিমন্ত্রিত ছিলেন অন্তত ২০০ জন।
খাবার খেয়ে পড়শি দুলাল দাস বলেন, ‘জীবনে এই প্রথম একশো বছরের কোনও মানুষের দাঁত গজানো এবং অন্নপ্রাশন দেখলাম। খুবই আনন্দের ব্যাপার।’ জগৎতারা রানি বিশ্বাসের মেজ ছেলে তথা নমশুদ্র কল্যাণ সমিতির সর্ব ভারতীয় সভাপতি হরষিত বিশ্বাস বলেন, ‘সবে মা ১০০ বছর পূর্ণ করলেন। এখনও বেশ সচল আছেন। কয়েকদিন হল দুটি দাঁত বের হওয়ায় আমার ছেলে এবং ভাইপোদের সিদ্ধান্তেই মায়ের মুখে ভাতের অনুষ্ঠান।’ অন্যান্য আত্মীয়রা একই সুরে জানান, তাঁরা এই অন্নপ্রাশনের আয়োজনে বিলক্ষণ আনন্দ পেয়েছেন। আর যাঁর শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে এত আয়োজন, সেই জগৎতারা রানি বিশ্বাস বলেন, ‘প্রথমে খুব লজ্জা লাগছিল। কিন্তু নাতিদের জেদের কাছে সম্মতি দিতে হয়েছে। তবে, সত্যি কথা বলতে, ভাগ্নের হাতে ভাত খেতে খুব ভালো লাগছিল।’