প্রতাপকুমার ঝা, জামালদহ: প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের (Nishith Pramanik) প্রাক্তন আপ্তসহায়কের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলে মেখলিগঞ্জের (Mekhliganj) বিজেপি নেতা বিশ্বনাথ শীল (Bishwanath Shil) ইতিমধ্যে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগপত্রে বিশ্বনাথ জানিয়েছেন, চাকরি দেওয়ার নামে নিশীথের আপ্তসহায়ক পরিচয়ে পরিমল তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষেরও টাকার বেশি টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা বিশ্বনাথ তাঁর কিছু আত্মীয়পরিজন সহ কিছু তরুণের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পরিমলকে দিয়েছিলেন। কিন্তু কারও চাকরি না হওয়ার পাশাপাশি কারও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলে বিশ্বনাথের অভিযোগ। এবারে সেই বিশ্বনাথের অভিযোগই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মেখলিগঞ্জের বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রভাব থাকতে পারে না। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক দধিরাম রায় বলেন, ‘পরিমল নামে কোনও আপ্তসহায়ক কোনওদিনই ছিল না নিশীথ প্রামাণিকের। বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। এটা আমরা আগে থেকে টের পেয়ে তাঁকে দলের সব পদ থেকে অনেক আগেই সরিয়ে দিই।’
বিশ্বনাথের দাবি, পরিমল অঙ্গনওয়াড়ি, বন দপ্তর, এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গ্রুপ-সি ও ডি পদে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। কেন্দ্রের চাকরি প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রথমে দিল্লিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন পরিমল। বিশ্বনাথ তা না করে দেন। এরপর পরিমল বিশ্বনাথের বাড়িতে এসে চাকরি দেওয়ার নামে চার-পাঁচজনের কাছে টাকা তোলেন। বিশ্বনাথের ভাগ্নে ভগীরথ শীল ফোনে বলেন, ‘পরিমল প্রথমে আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। মামা বিশ্বনাথ শীল নিজেই আমার জন্য চাকরি পাওয়ার আশায় টাকা দেন।’ পাশাপাশি পরিমল একটি ভুয়ো নিয়োগপত্র দেন বলেও অভিযোগ করেন ভগীরথ। বিশ্বনাথের এক আত্মীয় বলেন, ‘আমরা গ্রামের কয়েকজন চাকরির আশায় টাকা দিই। মাঝে কিছু টাকা ফিরে পেয়েছি।’
বিশ্বনাথের বর্তমান নিবাস ময়নাগুড়ি ব্লকের দক্ষিণ মাধবডাঙ্গা এলাকায় হলেও তাঁর আদিবাড়ি মেখলিগঞ্জের উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ১৬৫ উছলপুকুরি দেউতিরহাট বাজার সংলগ্ন গ্রামে। পরিমলের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হওয়া বিশ্বনাথের বিরুদ্ধেই নিজের গ্রামে চাকরি সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। সোমবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ি তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, বিশ্বনাথ বছর পাঁচেক ধরে বাড়ি থাকেন না। চাকরির ঘুষ কাণ্ডে বিতর্কিত বিশ্বনাথের এই লোকচক্ষুর আড়ালে যাওয়ার নেপথ্যে তাঁরই কর্মকাণ্ড দায়ী কি না তা নিয়ে এলাকায় কানাঘুষো রয়েছে। প্রতিবেশী বুলবুলি বর্মন অবশ্য জানান, ‘তিনি কারও ভয়ে এলাকা ছাড়েননি। বাইরে থেকে একটা লোক এসেছিল। সেই টাকা নিয়েছিল।’ মেখলিগঞ্জ ব্লক তৃণমূল সভাপতি কেশবচন্দ্র বর্মনের বক্তব্য, ‘ক্ষমতায় না এসেই বিজেপি নেতারা টাকা তুলে বেড়াচ্ছে। আবার এরাই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হচ্ছে।’