মানিকচক: বিজেপির (BJP) দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক চলাকালীন মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল। পঞ্চায়েত প্রধান ও দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত সদস্য প্রতিমা মণ্ডলকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। জানা গিয়েছে, বিজেপির জেলা সভাপতি পার্থসারথী ঘোষ ও জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌড়চন্দ্র মণ্ডলের সামনে প্রতিমাদেবীকে মারধর করা হয়। প্রতিমা মণ্ডলের ছেলে বঙ্কিম মণ্ডল ও তার এক সঙ্গী গৌরাঙ্গ মণ্ডলকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই পঞ্চায়েত সদস্য বর্তমানে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে (Manikchak Rural Hospital) চিকিৎসাধীন। এনিয়ে দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শক্তি মণ্ডল সহ দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মানিকচক থানায় (Manikchak Police Station) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি পার্থসারথী ঘোষ।
জানা গিয়েছে, বিজেপি পরিচালিত দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শক্তি মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ত সঞ্চালক বিজেপি সদস্য প্রতিমা মণ্ডল এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন। প্রতিমা মণ্ডলের ছেলে ও সেই এলাকার আরও কয়েকজন যুবক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগ তুলে নিতে বারবার চাপ দেন প্রধান, ঠিকাদার ফেকন মণ্ডল ও পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী দীপঙ্কর মণ্ডল। এমনকি মথুরাপুরের একটি ফাঁকা আম বাগানে পঞ্চায়েতের পূর্ত সঞ্চালক প্রতিমা মণ্ডলকে টেন্ডারের নথিতে স্বাক্ষর করাতে ঠিকাদার ফেকন মণ্ডল চাপ দেয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, টেন্ডার নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে বন্দুক দেখিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় পঞ্চায়েত সদস্যকে। প্রতিমা মণ্ডলের ছেলে ও এলাকার কয়েকজন যুবক প্রধানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক মহলে লিখিত অভিযোগ জানান। অভিযোগ তুলে নিতে তাঁদের বিরুদ্ধে ভূতনি থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেন প্রধান। প্রধানের বিরুদ্ধে লাগাতার দুর্নীতির খবর সম্প্রচারিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এদিন সন্ধ্যা নাগাদ মানিকচকের (Manikchak) বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে এই বিষয়ে মিউচুয়ালের জন্য একটি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ মালদা বিজেপি জেলা সভাপতি পার্থসারথী ঘোষ, জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌড়চন্দ্র মণ্ডল সহ আরও অনেকে। অভিযোগ, বৈঠক চলাকালীন হঠাৎই প্রতিমা মণ্ডল ও তাঁর ছেলের উপর চড়াও হয় প্রধান ও ঠিকাদার।
এদিকে পঞ্চায়েত সদস্যর ছেলের দাবি, ‘জেলা সভাপতি ও জেলা সাধারণ সম্পাদকের সামনে মাকে মারধর করা হয়। আমাকেও ব্যাপক মারধর করা হয়। আমরা বিজেপি করি। আর বিজেপি কার্যালয়ের ভেতরে আমাদের মারধর করা হল। আমরা প্রচন্ড আতঙ্কে আছি।’ যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দক্ষিণ মালদা বিজেপি জেলা সভাপতি। পার্থসারথী ঘোষের দাবি, ‘এটা সম্পূর্ণ আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। বৈঠক চলাকালীন দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। তবে কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
এবিষয়ে দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শক্তি মণ্ডলের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এই বিষয়ে মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, ‘পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। তবে এটা বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বিজেপি সদস্যরা। প্রশাসনকে বলব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’