মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির শহর এলাকায় জমি মাফিয়াচক্রে নাম জড়াল এক বিজেপি নেতার। শিলিগুড়ির এক বাসিন্দা সম্প্রতি জমি কিনেছেন। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা কাটমানি চান সানু বৈদ্য নামে ওই নেতা। টাকা না পেয়ে দলবল নিয়ে মধ্যরাতে জমির মালিকের ওপর সশস্ত্র হামলা করেন তিনি। শিলিগুড়ি ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের পদ্ম নেতা সানুর বিরুদ্ধে রয়েছে বেআইনি জমি কারবারের অভিযোগও। ইতিমধ্যে আশিঘর ফাঁড়ির পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার সানুকে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়। বিচারক ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পুরনিগমের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি কলোনিতে থাকেন স্বপন মণ্ডল। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিরঞ্জননগরে ৯৯ লক্ষ টাকায় জমি কিনেছেন তিনি। অভিযোগ, সেই খবর কানে যেতেই ৩০ লক্ষ টাকা কাটমানি চেয়ে বসেন সানু। টাকা না দেওয়ায় রবিবার রাতে দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র সহ স্বপনের ওপর চড়াও হন বিজেপি নেতা। নেতাজি কলোনিতে এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
স্বপনের দাবি, ‘সানু দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাফিয়ারাজ চালাচ্ছে। তোলা না দেওয়ায় লোকজন নিয়ে আমার ওপর হামলা করেছে সে।’ স্বপনের ওপর হামলা চালানোর সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে ফেলেন সানুকে। এরপর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে।
এর আগে বারবার জমি সংক্রান্ত বেআইনি কর্মকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শাসকদলের সংশ্লিষ্ট ব্লকের সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক। প্রতিটি ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। এবার সেই শিবিরের এক নেতার কীর্তিতে ‘ইস্যু’ হাতছাড়া করতে নারাজ শাসকদল। পুরনিগমের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অলক ভক্ত বলছেন, ‘শেষ পুরনিগমের নির্বাচনে তৃণমূলের রঞ্জন শীলশর্মার বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সানু। তার আগের ভোটে একই ওয়ার্ডে আমার বিরুদ্ধেও ওই দলের প্রার্থী ছিল সে।’ বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লক তৃণমূলের সম্পাদক নির্মল রায়। তাঁর কথায়, ‘সানুকে জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে সবাই চেনে। বিধায়ক-সাংসদ হিসেবে বিজেপির প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে এলাকায় সানুর মতো মাফিয়াদের দাপট বাড়বেই।’
জমি কাণ্ডে দলের নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির পদ্ম বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘জানি না কী হয়েছে। আমি বলব, আইন আইনের পথে চলবে।’ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, ‘এরকম কিছু তো শুনিনি। কেউ বলেনি। তবে যদি এধরনের অভিযোগ উঠে থাকে, তবে কিছু বলার নেই। আইনত যা হওয়ার হবে।’
কয়েকদিন আগে শান্তিনগরের এক বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে নীতিপুলিশির অভিযোগ উঠেছিল। সেক্ষেত্রেও নেত্রীর পাশে দাঁড়ায়নি দল। এবারে সরাসরি জমি কাণ্ডে নাম জড়াল আরেক নেতার। যদিও দল এসবে প্রশ্রয় দেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে জেলা নেতৃত্ব।