সানি সরকার, শিলিগুড়ি: কোথাও হাঁটুজল, কোথাও আবার তার চেয়ে বেশি। ফলে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে (NJP) পা রেখে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। যাঁরা ট্রেন ধরতে স্টেশনটিতে আসছেন, তাঁদেরও জলকাদা পায়ে মাড়াতে হচ্ছে। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে রেলের ভূমিকা। এনজেপিতে কর্মরত রেলকর্মীরা কেন নীরব, তা নিয়েও সরব অনেকে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, যাত্রীদের চরম সমস্যায় পড়তে হলেও তা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই রেলকর্তাদের। বরং বিশ্বমানের স্টেশন গড়ার কাজের কথা বলে তাঁরা দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। এবার এমন অব্যবস্থার কথা তুলে ধরে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি দিলেন শিলিগুড়ির বিজেপি(BJP) বিধায়ক শংকর ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘যে লক্ষ্যে এনজেপিকে গড়ে তোলা হচ্ছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু জমা জলে প্রত্যেকদিন যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য জিএমকে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করব, রেলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখন দেখার শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকরের চিঠি পেয়ে রেল কী করে।
এনজেপিকে বিশ্বমানের স্টেশন গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে রেলের তরফে কম বিজ্ঞাপন করা হয়নি। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হতেই জল ভেঙে এনজেপিতে চলাচল বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই কাজের জন্য। নতুন ফুট ওভারব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সবসময়ই এক হাঁটুর বেশি জল দাঁড়িয়ে থাকছে। ফলে অজান্তে যাঁরা স্টেশন থেকে বের হওয়ার জন্য ফুট ওভারব্রিজটি ব্যবহার করেন, তাঁদের ফের প্ল্যাটফর্মে ফিরে যেতে হয়। পথ ধরতে হয় এসকালেটর সংলগ্ন ফুট ওভারব্রিজের। এখানেও রয়েছে জল-দুর্ভোগ। এই ভোগান্তি আরও বেড়েছে গাড়ির স্ট্যান্ড দূরে সরে যাওয়ায়। অগত্যা জলকাদা পেরিয়েই গাড়ি বা টোটো, অটোতে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাঁরা ট্রেন ধরতে যান, তাঁদেরও এসকালেটরের সামনে নেমে জলের মধ্যে দাঁড়াতে হয় প্রায় সময়। ফলে রেলের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই রুষ্ট।
বিভিন্ন পুরসভা যদি পাম্প ব্যবহার করে জমা জল বের করে অন্যত্র ফেলতে পারে, তবে রেলের মতো বড় প্রতিষ্ঠান কেন এই কাজ করতে পারে না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সঞ্জীব পালের মতো এখানকার ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘রেলের কাজের জন্য আউটলেটগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন বিপত্তি দেখা দিয়েছে। কেন নতুন করে কয়েকটি আউটলেট তৈরি করা হচ্ছে না?’
ব্যবসা নষ্ট হওয়ায় সুজয় সরকারের নেতৃত্বে আইএনটিটিইউসি জলনিকাশি নিয়ে আন্দোলনও করেছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ যে হয়নি, তার প্রমাণ মেলে এনজেপির জলছবিতেই। জলকাদার জন্য গাড়ি নোংরা হওয়া, ব্যবসার ক্ষতি হওয়ার কথা বলছেন জাতীয়তাবাদী ট্যাক্সি অ্যান্ড প্রাইভেট কার ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি (এনজেপি ইউনিট) উদয় সাহা। তিনি বলছেন, ‘ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি থাকে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কিন্তু জমা জলে প্রবীণ, শিশু এবং অসুস্থ যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তাঁদের সমস্যা দূর করতে আমাদের পক্ষে যতটা করার করছি।’