নয়াদিল্লি: কথায় বলে ‘পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে’। কৌশলগত নীতি বা চালের ক্ষেত্রেও বুঝি একই যুক্তি প্রযোজ্য। অধুনাবিস্মৃত সেই পুরোনো চালে আবার নির্বাচনের ময়দানে বাজিমাৎ করতে চাইছে মোদি-শা ক্যাম্প এবং কী সেই ‘চাল’ তা নিয়েই নতুন করে জল্পনার মৌরসীপাট্টা কায়েম হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গেরুয়া শিবিরের এক বর্ষীয়ান নেতা জানিয়েছেন, বিজেপির গোপন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’টির নাম – ‘হর বুথ মজবুত’ প্রকল্প।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের সংগঠনকে চাঙ্গা করতে সারা দেশে এই ‘হর বুথ মজবুত’ শীর্ষক প্রচারাভিযান শুরু করেছিলেন বিজেপির হেভিওয়েট নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল দেশের সব রাজ্যের নির্বাচনি বুথ ভিত্তিক দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করা। এই মর্মে রাজ্যভিত্তিক নির্বাচনি প্রচারাভিযানেও অংশ নেন অমিত শা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেবার এই ‘শাহী’ উদ্যোগের সুফল বিজেপি পেয়েছিল হাতেনাতে। বিরোধী শিবিরকে পর্যুদস্ত করে ২০১৯ লোকসভা ভোটে গোটা দেশে এককভাবে ৩০৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। নয়াদিল্লিতে গেরুয়া শিবির সূত্রের দাবি, সদ্যসমাপ্ত কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে গো-হারান হেরে ফের একই ফর্মুলায় ফিরতে উদ্যোগী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা। কর্নাটকই বুঝিয়ে দিয়েছে দলের বুথভিত্তিক সংগঠনে দুর্বলতা থাকলে কি হাল হতে পারে। এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে চলতি বছরেই তিনটি বড় রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ হিসেবে বেছে নিয়ে অ্যাসিড টেস্টে নামতে চলেছে গেরুয়া শিবির যার নেতৃত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা, এমনই দাবি নয়াদিল্লিতে দলীয় সূত্রের।
প্রসঙ্গত, প্রতিটি বুথের ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারলে কোনওভাবেই কাঙ্খিত ফল লাভ সম্ভব নয় এটা অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি। গতবারের লোকসভা ভোটের বহুদিন আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা বিজেপির নেতা কর্মী ও সমর্থকদের প্রত্যেককে ‘জনে জনে বার্তা’-নীতির উপরে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গতবারের মতো এবারও গোটা দেশে দলের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার লক্ষ্যে গৃহীত এই বিশেষ প্রচারাভিযানে কোনরকমের ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না প্রদেশ নেতৃত্বকে সাফ জানানো হয়েছে সেকথাও। হিমাচল প্রদেশ এবং কর্ণাটকের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হওয়ার পরে সামান্য ভুলের কারণে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাকফুটে পড়ে যেতে পারে গোটা গেরুয়া শিবির, তা বুঝতে বাকি নেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের। এই মর্মেই গ্রহণ করা হচ্ছে যাবতীয় পদক্ষেপ, দাবি দলীয় সূত্রের।
তাত্পর্যপূর্ণভাবে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে তা নিশ্চিত করার উদ্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা যখন ‘হর বুথ মজবুত’ প্রচারাভিযান শুরু করেন তখন তিনি বাড়তি দৃষ্টি দিয়েছিলেন বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির প্রতি। এই মর্মে অগ্রাধিকার পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ যেখানে রাজ্যের সর্বত্র বিশেষ প্রচারাভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সুনির্দিষ্ট ভোট ব্যাংকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে সামনে তুলে ধরে। ২০২৪-র মহারণেও একই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নয়াদিল্লিতে দলীয় সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে ‘হর বুথ মজবুত’ প্রকল্প প্রণয়ন করার জন্য রাজ্য নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোন জেলায় দলের সংগঠনের কি পরিস্থিতি তা হাতে কলমে খতিয়ে দেখে রাজ্য নেতৃত্বকে প্রচারের প্রয়োজনীয় রূপরেখা তৈরির কথাও বলেছেন নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় নেতারা।