তুফানগঞ্জ: বাড়ি ফিরে বকুনি জুটলেও গরম থেকে রেহাই পেতে বন্ধুদেরকে নিয়ে পুকুর কিংবা নদীতে একটানা মাতামাতি কোনও নতুন ঘটনা নয়। এই গরমে গ্রাম ও আধা শহরে এমন ছবি হামেশাই দেখা যায়। তুফানগঞ্জে এবার ছেলেমেয়েদের এমন ভিড়ের ছবি দেখা গেল সুইমিং পুলে। গরম বাড়তেই জেলার বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি অসম থেকেও জলের টানে এখানে আসছেন তরুণ-তরুণীরা।
তুফানগঞ্জ সুইমিং পুল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কমিটির সম্পাদক রমেনচন্দ্র বিশ্বাস জানান, সোম ও বৃহস্পতিবার বাদ দিয়ে সাঁতারুদের জন্য সপ্তাহে ৫ দিন রাখা হয়েছে। মহকুমা ছাড়াও নিম্ন অসম থেকেও অনেকে ভিড় করছেন। স্নান করতে আসা অনেকেই থাকেন যাঁরা খুব ভালো সাঁতার জানেন না। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও প্রশিক্ষক।
তুফানগঞ্জ শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে এই সুইমিং পুল। তুফানগঞ্জবাসীর কাছে পুলটি বরাবরই ফুসফুস বলেই পরিচিত। এই পুলের ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল নীল জলে গিজগিজ করছে সাঁতারুদের মাথা। গা ডুবিয়ে একদিকে যেমন হইচই করছেন। সানগ্লাস চোখে অনেকেই আবার নানা পোজে গ্রুপ সেলফি তুলছেন। সাঁতারুদের ভিড় সামলাচ্ছে সুইমিং পুল কর্তৃপক্ষ। এদিন অসমের আগমনী এলাকা থেকে প্রায় ৩০ কিমি পেরিয়ে স্নান করতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী সঞ্জীব দাস। বন্ধুদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক জলে মাতামাতির পর বললেন, ‘নীল জল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। অথচ দুঃখের বিষয় কাছাকাছি কোনও সুইমিং পুল নেই। তাই ৬ বন্ধু মিলে এতদূর পাড়ি।’
এদিন সপরিবারে বক্সিরহাট থেকে এসেছিলেন সৌরভ দত্ত। তিনি জানালেন, ‘গত মাস থেকে ছেলে বায়না ধরেছে সুইমিং পুলে স্নান করবে। ছুটির দিনে সেই উদ্দেশ্যেই আসা। তবে এতক্ষণ জলে থাকার পরেও আশ মিটল না, ইচ্ছে করছে আরও খানিকটা সময় গা ভিজিয়ে রাখি।’ পুর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীপক পাল। স্নান শেষ করার পর বলেন, ‘টানা ১ দশক ধরে এই পুলে স্নান করে আসছি। সে সময় উত্তরবঙ্গের কোথাও এত বড় মাপের সুইমিং পুল ছিল না। তাই পুলটি আমাদের কাছে আবেগ।’
তবে এই আরামের মধ্যেও বিপদ দেখছেন চিকিৎসকরা। তাই নিয়মিত সাঁতারুদের সাবধান হতে বলছেন তাঁরা। মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক অরিন্দম পালের কথায়, ‘ক্লোরিন জীবাণুনাশক, কিন্তু মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিকভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে থাকলে, ত্বকের মেলানিনে পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে চোখেরও ক্ষতি করতে পারে।’ তারপরও দিনশেষে শরীরচর্চার জন্য সাঁতারের বিকল্প হয় না। তাই জলের নামা আগে ও পরে গা ধুয়ে নিলে এবং টুপি, চশমা পড়ে নামলে এই সমস্যাগুলি অনেকটাই দূর হতে পারে বলে মত তাঁর।