সেনাউল হক, কালিয়াচক: সময়মতো স্কুলে গিয়েছিল ইকবাল ও ইরফান। কিন্তু স্কুল থেকে আর ফিরল না। বাড়ি থেকে দূরের একটি পুকুরে উদ্ধার হল দুই নাবালকের দেহ। মঙ্গলবার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কালিয়াচকের(Kaliachak) সিলামপুরের চুড়িওয়ালা মোড় বাহাদুরপুরে। কী করে স্কুল থেকে পুকুরে চলে গেল তারা, এনিয়ে ধোঁয়াশায় পরিবার।
মৃত দুই শিশুর নাম ইকবাল মোমিন(১০) ও ইরফান মোমিন (৮)। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় সিলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানেই দুই শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এদিন সিলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। তাদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
কিন্তু দুই নাবালকের মৃত্যুর ঘটনায় স্কুলে হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন পরিজনরা। পরিবারের দাবি, এদিন ইকবাল ও ইরফান সময়মতো স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু স্কুল শেষ হলেও আর ফিরে আসেনি। এরপর পরিবারের লোকজন খোঁজখবর নিতে শুরু করে। তাঁরা স্কুলে গিয়ে খোঁজখবর নেয়। কিন্তু শিক্ষকরা কিছু জানাতে পারেনি। মৃতের এক আত্মীয়ের অভিযোগ, স্কুলে ওই দুই পড়ুয়াকে দিয়ে জলের ট্যাংক পরিষ্কার করানো হয়েছিল। পরিষ্কার করতে গিয়ে তাদের জামাকাপড় নোংরা হয়ে যায়। তারপরেই তারা পুকুরে নাকি স্নান করতে যায়। কিন্তু আর পুকুর থেকে উঠে আসেনি। পুকুরপাড়ে তাদের জামাকাপড় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা খুঁজতে শুরু করেন। দীর্ঘক্ষণ পর দুই শিশুর দেহ উদ্ধার হয়।
মৃত ইকবাল মোমিনের বাবা শফিউল মোমিন জানান, ‘প্রতিদিনের মতো ছেলে স্কুলে গিয়েছিল। তারপরে স্কুল থেকে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। স্কুলের জলের ট্যাংক নাকি আমার ছেলেদের দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়েছিল। তাদের জামা কাপড় ভিজে গিয়েছিল। তারা পুকুরে স্নান করতে যায়। তারপরে পুকুরে তলিয়ে যায়।’
ইকবালের দিদা জানালেন, ‘স্কুল যাওয়ার সময় আমার কাছ থেকে ৫ টাকা চেয়েছিল নাতি। সেই টাকা নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু স্কুল ছুটির পর বাড়ি আসেনি। আমরা স্কুলেও খোঁজখবর নিতে যাই। কিন্তু শিক্ষকরা কিছু বলেননি। পুকুরের পাড়ে খুঁজতে গিয়ে তাদের জামাকাপড় দেখতে পাই। তারপর ওদের দেহ উদ্ধার হল। কী করে এমন ঘটল বুঝতে পারছি না।’
ইরফান মোমিনের বাবা মিঠু মোমিনের কথায়, ‘স্কুলে গিয়ে এরকম হল কেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলেকে এভাবে হারাতে হবে ভাবিনি।’
যদিও দক্ষিণ সিলামপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক আমিরুদ্দিন আহমেদের সাফাই, ‘ওদেরকে দিয়ে জলের ট্যাংক পরিষ্কার করা হয়েছে, এটা আমরা জানি না। তবে খুব দুঃখজনক ঘটনা। স্কুলে আসার পরে এরকম কীভাবে হল কিছু বুঝতে পারছি না।’