কোচবিহার: বইমেলা নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে জেলা শাসকের দপ্তরের কনফারেন্স রুমে বৈঠক হল বুধবার। বইমেলার পাশাপাশি গ্রন্থাগারগুলির উন্নয়ন, কর্মীসংকট, গ্রন্থাগারে কর্মী নিয়োগ সহ বিভিন্ন বিষয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা করা হয়। এবারের মেলায় প্রায় ১৫০টি স্টল আসবার কথা রয়েছে। বইয়ের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বাড়াতে মেলায় ছোটদের বইপত্রের ওপর জোর দেবে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ব্রেইলের প্রকাশনা সংস্থাকে আনবার কথা ভেবেছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, ২৫ ডিসেম্বর দিনভর বইমেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হবে। জোর দেওয়া হবে স্থানীয় প্রকাশনা সংস্থার ওপরেও।
দু’বছর বাদে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলার মাঠে ফিরছে জেলা বইমেলা। চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত এই মেলা চলবে। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক অরবিন্দকুমার মিনা, জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক শিবনাথ দে, লোকাল লাইব্রেরি অথরিটির সদস্য তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় সহ অন্যরা। কোচবিহার লোকাল লাইব্রেরি অথরিটির সদস্য পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘এবারের মেলায় স্থানীয় প্রকাশনী, রাজবংশী এবং কামতাপুরি ভাষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাসমেলার মাঠে মেলার আয়োজন হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর বইয়ের বিক্রি আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।’
এদিকে, রাসমেলার মাঠে বইমেলা ফেরার কথা জানাজানি হতেই বিভিন্ন প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিখিলেশ রায় সামাজিক মাধ্যমে এক দীর্ঘ লেখা পোস্ট করেছেন। সেখানেই তিনি লিখেছেন, ‘রাসমেলা মাঠের তুলনায় এবিএন শীল কলেজ মাঠই বইমেলার উপযুক্ত জায়গা বলে আমি মনে করি। পরিচ্ছন্ন ও পরিমিত পরিসরে গতবছর ওই কলেজ মাঠে বইমেলার পরিবেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। রাসমেলা মাঠের প্রধান সমস্যা, সেখানে অনুষ্ঠান মঞ্চে উচ্চগ্রামে মাইক বাজানো হয়। স্টলগুলোর বলয়টা এত ছড়ানো থাকে যে, এমাথা ওমাথা হেঁটে অনেকটা দূরের সব স্টলে যাওয়াটাই অনেকের পক্ষে সমস্যার কারণ হয়ে যায়। বইমেলার সুন্দর ও রুচিশীল পরিবেশ ক্রেতাদের মেলার মাঠে ঢুকতে আকর্ষণ করে। এতে বইয়ের বিক্রিও বাড়ে।’
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কথাতে সহমত জানিয়েছেন অনেকেই। কেউ লিখেছেন, ‘বইমেলা তো গতবার বই কম ফাস্ট ফুড স্টল আর শিল্পী হাট মনে হয়েছে আমার।’ সৌভিক দেব নামে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, রাসমেলার মাঠটিকে একটু অন্যভাবে সাজানো যেতে পারে। তাতে ওই স্থানটাই অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হবে।
কবি নীলাদ্রি দেবের যুক্তি, ‘বইমেলা এর আগে বিভিন্ন জায়গায় হলেও একটা বড় সময়জুড়ে রাসমেলার মাঠে হয়েছে। এছাড়া মাঠটি তুলনায় অনেকটা বড় হওয়ায় একই উঠোনের ভেতরে সব প্রকাশনা সংস্থাকে দেখা সম্ভবপর হয়।’ তবে তিনি আরও বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গ বইমেলার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য থাকলেও বই দেখা, বই পড়া বা বই বেছে নেওয়ার জায়গায় যাতে আঘাত না হয়, সে দিকটাও দেখা উচিত। এককথায়, মেলার কেন্দ্রবিন্দু যাতে বই-ই থাকে, সেদিকটি অবশ্যই কর্তৃপক্ষের ভাবা প্রয়োজন।’
এবিষয়ে জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক শিবনাথ দে বলেন, ‘সবসময় পড়তে বা বই দেখতে কারই-বা ভালো লাগে না। তাই মেলার মাঠের মাঝে কফি বা চায়ের স্টল থাকলে সেটা খাদ্যমেলা হয়ে যায় না। রাসমেলার পরিসর অনেকটাই বড়। গতবছর কলেজের মাঠে মেলা করায় কিছু প্রকাশনা সংস্থা আমাদের অভিযোগ করেছে, মাঠের মাঝে দোকান করায় তাদের সেভাবে বিক্রি হয়নি। তাই জায়গা পরিবর্তন করে রাসমেলা মাঠকে আমরা বেছে নিয়েছি।’