রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

উত্তরবঙ্গের ব্যাপ্তিকে ছোঁয়া উচিত বইমেলার 

শেষ আপডেট:

উমা মাজী মুখোপাধ্যায়

১৯৯৭ সালে কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে আসি। তখনও শিলিগুড়ি এত পল্লবিত হয়নি। ছিমছাম ছোট্ট একটা সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর। বাণিজ্য শহর হিসাবেই পরিচিত বেশি।

তখন থেকেই উত্তরবঙ্গ বইমেলায় যাতায়াত। তখন উত্তরবঙ্গ বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিনের জন্য আলাদা প্যাভিলিয়ন ছিল না। ২০১০-’১১ সালেও লিটল ম্যাগের প্যাভিলিয়নের জন্য আমি ও আমার কুড়ি-পঁচিশজন ছাত্রছাত্রী বইমেলা কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম। লিটল ম্যাগাজিনকে আলাদা প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার জন্য।

শিলিগুড়িতে বইমেলার আয়োজন করেন কিছু বিশিষ্ট পুস্তক ব্যবসায়ী। যেহেতু এখানে এখনও প্রকাশক সংস্থা গড়ে ওঠেনি- তাই বইগুলো সব কলকাতা নির্ভর। এখানকার নিজস্ব সৃষ্টি গবেষণা বিশেষ চোখে পড়ে না বইমেলাতে। খুবই গতানুগতিক বইমেলা- কিছু ইংরেজি ও কলকাতার প্রকাশনা নির্ভর বই এই মেলাতে মেলে।

এখন আকর্ষণীয় হয়ে বেড়ে উঠেছে লিটল ম্যাগাজিনের প্যাভিলিয়নগুলি। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মানে ব্যাপ্তি অনেক এবং উত্তরবঙ্গের আটটি জেলা থেকে প্রচুর ছোট পত্রিকা প্রকাশিত হয়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট, ইসলামপুর, রায়গঞ্জ, মালদা প্রভৃতি উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলার কন্দরে কন্দরে লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশ ঘটে। সেগুলোও যদি এই বইমেলায় একত্রিত করা যেত।

আসলে উত্তরবঙ্গ একটি বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রিত সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল! আর শিলিগুড়ি! সত্যিই কসমোপলিটান। কত ভাষাভাষী মানুষের অবস্থান। বাংলা, হিন্দি, নেপালি, রাজবংশী বিভিন্ন ভাষার সহাবস্থান। তাই উত্তরবঙ্গ বইমেলাকে ভাবতে হবে – ‘উত্তরবঙ্গ’ এই ব্যাপ্তিটাকে আত্মীকরণ করে ‘উত্তরবঙ্গ বইমেলা’ হয়ে উঠতে হবে। নেপালি অ্যাকাডেমি, হিন্দি অ্যাকাডেমি, রাজবংশী অ্যাকাডেমির কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যদি নেপালি প্রকাশক, হিন্দি প্রকাশকদের আমন্ত্রিত করে আনা যায়।

আর শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কার্সিয়াংকে আশ্রয় করে কত ইংরেজিমাধ্যম স্কুল। তার মানে ইংরেজি ছেলেমেয়েদের সংখ্যা ভালোই। তাই ভালো ভালো ভারতীয় ইংরেজি লেখকের বই আনা যায়!

এর জন্য বড় জায়গা দরকার। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে যে জায়গা নেই। কলকাতা বইমেলা যেমন কলকাতা ময়দান ছেড়ে বাইপাসে সরে গিয়েছে তেমনই যদি কাওয়াখালিতে এই মেলা সরিয়ে বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে করা যায়! এর জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা করা দরকার।

তবু এই শীতের আমেজে হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়িতে এই বইমেলাটি খুব উপভোগ করতাম। শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিনের স্টল দিতাম। আমারও এই সময় কলেজে পরীক্ষা থাকে। সকাল ন’টা থেকে সন্ধে ছ’টা-সাতটা। ফলে অনেকদিন শিলিগুড়ি বইমেলা যাওয়া হয়ে ওঠে না। মিস করি লিটল ম্যাগাজিনের প্যাভিলিয়নকে! মল্লার, পদ্য, ফুলেশ্বরী নন্দিনী, শিলিগুড়ি জংশন কত পত্রিকা! মিস করি।

তবুও উত্তরবঙ্গ বইমেলাকে অন্যভাবে ভাবা যায়- ভাবতে হবে! উত্তরবঙ্গের ব্যাপ্তিকে উত্তরবঙ্গ বইমেলায় মেলাতে হবে! এখান থেকে যেন উত্তরবঙ্গের আত্মাকে চেনা যায়- উত্তরবঙ্গের বহুত্বকে চেনা যায়- বহু সংস্কৃতিকে মেশানো যায়।

(লেখক অধ্যাপক। শিলিগুড়ির বাসিন্দা)

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

পঁচিশে বৈশাখ কেন যে একদিনে শেষ হয়

আশুতোষ বিশ্বাস এক সপ্তাহ আগে পঁচিশে বৈশাখ পেরিয়ে গেল তো...

ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না

রূপায়ণ ভট্টাচার্য মাননীয় জাতীয় প্রেসিডেন্ট শ্রী জেপি নাড্ডাজি আমাকে ফোন...

গ্রামের ছাত্রীরা যখন শহরে পড়তে যায়

মৌবনী মোহন্ত কাঁটাতার রয়েছে মেখলিগঞ্জ থানার সেই প্রত্যন্ত গ্রামে। নাম...

আওয়ামী নিষিদ্ধে চাপে হাসিনা, ভারতও

অমল সরকার গত বছর ৫ অগাস্টের পর থেকেই বাংলাদেশে আওয়ামী...