দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার: বুধবার সকালে ময়নাকাঠের মহাস্নান এবং বিশেষ পুজোর মাধ্যমে রাজ আমলের পরম্পরা মেনে বড়োদেবীর শক্তিদণ্ড অর্থাৎ ময়নাকাঠটি স্থাপন করা হবে। নিয়মানুসারে এদিন রাধা অষ্টমীর ভোররাতে ময়নাকাঠটি মদনমোহন ঠাকুরবাড়ি থেকে বড়োদেবীর মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর রীতি মেনে সেখানে কাঠটির মহাস্নান ও বিশেষ পুজো সম্পন্ন হবে। এরপরই ট্রলিতে স্থাপন করা হবে ময়নাকাঠটিকে।
এবছর প্রথমবার এই পুজো করবেন দীনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও রতনকুমার ভট্টাচার্য। দেওয়া হবে একজোড়া পায়রা বলি। পাশাপাশি রান্না হবে পরমান্ন ভোগ। এরপর ময়নাকাঠটিকে তিনদিন হাওয়া খাওয়ানো হবে। পরবর্তীতে এই কাঠের উপর নাটাবাড়ির চামটা থেকে আনা মাটির সঙ্গে খড় মিশিয়ে শুরু হবে বড় দেবীমূর্তি তৈরির কাজ। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সচিব কৃষ্ণগোপাল ধাড়ার বক্তব্য, ‘নিয়মনিষ্ঠা মেনে প্রতিবারের মতো এবারেও ময়নাকাঠকে বুধবার ভোররাতে বড়োদেবী মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি।’
ময়নাকাঠটিকে দেবীবাড়ির মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার পর সকাল ৯টা নাগাদ মদনমোহন ঠাকুরবাড়ি থেকে বিশেষ হনুমানদণ্ডটিও সেই মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর হবে সেই বিশেষ পুজো। এদিন দুপুরেই হনুমানদণ্ডটি ফের মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে ফিরিয়ে আনা হবে বলে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড জানিয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারেও বড়োদেবীর মূর্তি গড়বেন প্রভাত চিত্রকর। পুরোহিত দীনেন্দ্রনাথ বলেন, ‘বুধবার ভোরে সমস্ত রীতি মেনেই মদনমোহন ঠাকুরবাড়ি থেকে দেবীবাড়িতে ময়নাকাঠ নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর মহাস্নান ও বিশেষ পুজোর পর কাঠটিকে প্রতিমা কাঠামো তৈরি করার ট্রলিতে স্থাপন করা হবে।’
৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই পুজোর নিয়মকানুন অন্যান্য পুজোর তুলনায় অনেকটাই আলাদা। কোচবিহারের বড়োদেবীর মূর্তি অন্যান্য দুর্গা প্রতিমার তুলনায় একেবারেই ভিন্ন। এখানে দেবীর ভয়ংকরী রূপ। লাল রঙের। মূর্তির আকারও অন্যান্য প্রতিমার তুলনায় বেশ বড়। এখানে মহিষাসুরের ডান হাতে কামড় দিয়ে রয়েছে সিংহ এবং বাঁ হাতে বাঘ। দেবীর উচ্চতা প্রায় সাড়ে ১১ ফুট। এখন রাজরাজারা না থাকায় পুজোর জাঁকজমক ও আড়ম্বর কিছুটা কমলেও রাজ আমলের নিয়মনিষ্ঠা ও রীতি একই রয়ে গিয়েছে।
প্রতিবারের মতোই এবছরও প্রতিপদ অর্থাৎ মহালয়ার পরের দিন দেবীর ঘট স্থাপন করা হবে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে ৯ অক্টোবর থেকে মহাষষ্ঠীর দিন পুজো শুরু হবে এবং ১৩ অক্টোবর দশমীতে দেবীর নিরঞ্জন হবে লম্বাদিঘিতে।