অভিশ্রী দাশগুপ্ত
আমি সদ্য ১৪ পার করা এক কিশোরী। বাবার কাজের জায়গা বিদেশ হওয়ায় ভারতের বাইরের অনেক পুজো দেখেছি। দেশে কলকাতা (Kolkata) ও বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) পুজোও দেখেছি। গত ৪ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় আছি। কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেন (Brisbane) আমাদের এখনকার ঠিকানা। এখানকার বাঙালিদের প্রতিষ্ঠান বেঙ্গলি সোসাইটি অফ কুইন্সল্যান্ড (বিএসকিউ) পরিচালিত দুর্গাপুজো (Durga Puja) এবার ২৭ বছরে পা রাখল। শুরু হয়েছিল পিতলের প্রতিমা দিয়ে। পরে শোলার প্রতিমা। তারপর কলকাতা থেকে আনা হত মাটির প্রতিমা। আর ২০১৬ সাল থেকে পুজো করা হয় ফাইবারের প্রতিমায়। তবে আমাদের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। যত্ন করে সংরক্ষণ করা হয়।
কলকাতায় তো এখনও পুজো হয়নি। তবে এখানে পুজো হয়ে গেল ৪, ৫ ও ৬ অক্টোবর। কলকাতার থেকে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। এমনটা কেন? বড়দের জিজ্ঞাসা করে উত্তর পেলাম, উইকএন্ডে পুজো না করলে নাকি হলঘর বা অডিটোরিয়াম খালি পাওয়া যায় না। তাছাড়া অফিস ছুটির ব্যাপারও তো আছে। এ তো আর কলকাতা নয় যে পুজোর দিনগুলোয় অফিস ছুটি থাকবে। আমাদের এবার পুজো হল কুরপারো সেকেন্ডারি কলেজ অডিটোরিয়ামে।
৪ তারিখ বড়রা সবাই মণ্ডপ সাজাতে লেগে গেল। আর আমরা, ছোটরা ফাইফরমাশ খাটতে লাগলাম। পরদিন পুজো আরম্ভ হয়ে গেল। পুরোহিত বাইরের কেউ নন। বিএসকিউর একজন সদস্য। ঢাকির ব্যাপারও এক। আমাদের মধ্য থেকেই একজন ঢাক বাজালেন।
আমি যেন এই পুজো উপলক্ষ্যে হঠাৎ বড় হয়ে গেলাম। আমার পরনে এখন শাড়ি। বড়রা শাড়ি ও ধুতি পরেছে। ছেলেরা পায়জামা ও পাঞ্জাবি। খুবই ভালো লাগছিল এত লোকের ভিড়। বাংলা ছাড়া আর কোনও ভাষায় কথা নেই। ৫ আর ৬ তারিখ তো সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা অবধি ভিড়ই ভিড়। এবার নাচের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বসে আঁকা প্রতিযোগিতাও হয়েছে। নাচ, গান, নাটক- সব বয়সিদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা। আমি নিজেও তো পারফরমার। গান গেয়েছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ছড়াছড়ি।
এছাড়া খাওয়াদাওয়ার বেশ বড় ব্যবস্থা ছিল। প্রায় ৭০০ জনের জন্য রান্নার আয়োজন করা হয়েছিল। ৪ তারিখ ডিনার দিয়ে শুরু এবং ৬ তারিখ ডিনার দিয়ে শেষ হয়েছে।
প্রতিমা সংরক্ষণ করার জন্য নিয়ে যেতে হবে। তাই তাকে ট্রাকে তোলা হল। অথচ তখনও তো মায়েদের সিঁদুরখেলাই শুরু হয়নি! পরে দেখি নিয়ে আসা হল ছোট এক পিতলের দুর্গার বিগ্রহ। তারপরে শুরু হল বিসর্জনের বিধি পালন।
সব শেষে এটাই বলব, দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় কোনও উৎসব নয়, বাঙালি সম্প্রদায়ের একতা, ভালোবাসা এবং স্থায়ী চেতনার উদযাপন। সেটা কলকাতায় হোক বা বিশ্বজুড়ে।