১
আনমনা
সুব্রতা ঘোষ রায়
বসন্ত এসেছিল পলাশের ডালে,
আনমনা মেয়ে তার
কোন ব্যথা নিয়ে কাঁদে
আড়ালে আড়ালে!
দেখা দিয়ে চলে যায়,
বাঁশি শুধু পড়ে থাকে পথে,
অতীত পাথর হয়!
ঈশ্বরী ওঠেন জয়রথে!
জয় আর পরাজয়
মাঝখানে বয়ে যায় নদী,
ভালোবেসে কারা ভাসে?
ভেসে যায়, ভাসে নিরবধি!
যাওয়া আসা স্রোতে ভাসা-
তবু কিছু কথা তোলা থাকে,
বসন্ত চলে যায় পলাশের কাছে
তার মনের গোপন গান জমা দিয়ে রাখে!
২
উত্তরবঙ্গ
মৃণালিনী
মেঘের কুয়াশায় ঢাকা পাহার-পর্বতের ঢালে
জেদি একগুঁয়ে ঘাড় বাঁকানো চা বাগান
হিংস্র জন্তুতে ঘেরা ডুয়ার্স
উত্তরবঙ্গ বিশ্ব তথা ভারতের নিভৃত গোপন কক্ষ
আরামদায়ক ব্যবহৃত ডাস্টবিন।
সাদা পোশাকের বেড়াল ওপাশের উচ্চ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
সিংহের গর্জন ভুলে ম্যাও ম্যাও করে
ওপাশ থেকে ছুড়ে দেওয়া এঁটোকাঁটা
কুড়িয়ে নেয় মাথা নীচু করে পরম ভক্তিতে।
৩
সংবিধান
অর্পিতা ঘোষ পালিত
ফুলশয্যার রাতে ছেলেটি সমর্পণ করে
রোদ মাখা গাঢ় লাল গোলাপ
আর কোঁচড় ভর্তি উপহার
পবিত্র মেয়েটির তোলপাড় বুকে
আঁকা ছিল অঙ্গীকারের স্নানের ছবি
স্পর্শের অভাবে ঢেকে যায় তা ধূসর মেঘে
বুকে লাগা রং নিঃশেষ হয় মুহূর্তেই
প্রেমের সংবিধান জানে
আগুন ছাড়া হয় না ভালোবাসা
৪
স্তব্ধতা
বৃষ্টি সাহা
আমাদের নীরবতা এখন মৃতের মতন শান্ত;
তীব্র কোনও শব্দ নেই,
ঝাঁঝালো কোনও মাথাব্যথা নেই।
এক সন্ধ্যা বুকে বসে কয়েক মুহূর্ত ধরে,
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে আছি।
বৃষ্টিমুখর সন্ধেয় হাঁফিয়ে উঠেছি স্মৃতিতে।
দূরত্ব একটি বিশাল উঠোন,
বিশাল দূরত্বের উঠোন পেরিয়ে ঘরে পৌঁছানো হয় ওঠে না আমাদের।
তুমি উঠোনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকো,
সহজ ভাষায় তোমাকে বোঝা হয়নি তোমায়।
৫
বিষাদ বসন্ত
কণিকা দাস
অনিঃশেষ রয়ে গেল সুখ দুঃখের বাতিঘর
কেউ সেখানে জ্বালেনি কোনও আলো
আলোয়ানের ভিতর থেকে উঠে আসা কুয়াশা
বাতাস ভিজিয়ে দেয় শীতল হতে চেয়েছ বলে
বাতাসেরও তো মান-অপমান বোধ আছে…
এখন আর কোনও ওজর-আপত্তি নেই
হয়তো এমনি করেই একদিন নিঃশেষ হবে
এক জীবনের ইতিকথা…
৬
জন্মনাড়ি
বাবলি সূত্রধর সাহা
ভূমিহীন মানুষ। না হয় নির্মাণ করোনি
সাংসারিক যাপন।
তবে এসো উভচর হই
উন্মোচিত করি কালচিহ্ন।
দহন আর দহন… ছাই ছাই অগ্নিস্নান
আত্মপীড়ন দেখেছ তো!
আজ নয় কাল চিতাতেই আশ্রয়
তবে কেন আবৃত এত জন্মদাগ!
ভূমিহীন মানুষ। না হয় বিনির্মাণ করো
খণ্ডিত অন্তর্জগৎ অথবা কাঙ্ক্ষিত মুক্তিপথ।
৭
ওরা যে নারী
সন্ধ্যা দত্ত
জলন্ত লাভায় তোমার জীবন,
গড়িয়ে চলছে অবিরত।
ধর্ষণ অপহরণ, খুন…
বিক্রি করা হয় চড়াদামে তোমাকে।
সবসময় নগ্ন করা হয়…
বিজ্ঞাপন হতে বিছানায়।
কোথাও একবিন্দু স্বস্তি নেই!
চলকে পড়ে না কোনও আশ্বাস।
ওঁত পেতে হায়নার দল,
খুবলে খাবার অপেক্ষায়।
তবুও কিছু কিছু দলছুট,
অ্যাসিড পোড়া মুখে…
সদর্পে দাঁড়ায় পর্দার সামনে।
আধপেটা খেয়ে জয়ের পতাকা,
তুলে দেয় দেশের মাটিতে।
ওর যে নারী!!
নিজেকে চেনাবার প্রতিজ্ঞায় অটল।
অসম্ভব মনের জোরে,
এগিয়ে চলার ব্রতে শামিল আজও।