১
বসন্ত বিলাপ
সুদীপ চৌধুরী
সজনে ফুলের মতো হেসে বলেছিল –
সবটাই নে।
ডুয়ার্সের রায়মাটাং বস্তির হাটে
সজনে পাতার তলে বসে ছিল সে
গভীর গহীন নীল চোখে
কী আকুলতা নিয়ে বলেছিল মেয়ে
সবটাই নে।
ও মেয়ে! এখনও কি রায়মাটাং হাটে
বসে থাকিস সেই অপেক্ষায়?
এখনও কি ঝরে ঝরে পড়ে সজনে ফুলের মতো রাশি রাশি হাসি?
আমার মাথার দিব্যি, আর কাউকে তুই বলিস না মেয়ে “সবটাই নে’’।
২
খালি পেটের গল্প
জয়দেব সাহা
কবিতার কাগজে মুড়ে
এই শহর,
প্রেমিকা হতে বলেছিল।
রোদ্দুরমাখা একজন প্রেমিকা।
সেদিন আমি চা বাগানে
ভরা পেট খুঁজতে ব্যস্ত।
শীত পেরিয়ে বসন্ত এসেছে ততদিনে।
ফুটো চালের নীচে
ভেজা কাঁথার গল্প এবার বিশ্রামে যাবে।
যাবে তো?
দেশে তো আবার উৎসব আসবে!
নুন-ভাত আর জলা জমির শাকের গন্ধে,
বাগানে দুপুর পেরোবে।
আজকেরই সাদা-কালো গন্ধ ওখানে,
আসছের কথা এ পাড়ায় তো
বহুদিন হয়নি।
৩
শেষকথা
সুনন্দ অধিকারী
বিবাহ মানে বাজি।
আঁতকে উঠলেন তো!
ভাবছেন লোকটা ছাগল না আহাম্মক?
তবে শুনুন একটু আরও আমার কথা।
শেয়ার মার্কেটের নাম শুনেছেন তো?
যে বাজারে হয় অংশীদারি কোম্পানির কেনাবেচা।
সে বাজার থেকে সেই কাগজই কিনতেন একদা বড়লোকরা।
কোম্পানিটির আংশিক মালিকানা যা কিনা
আজও মূলত একইরকম বিষয়টা।
তবে কি সেদিন নানা অস্বচ্ছতা!
তুলনায় আজ স্বচ্ছতা অনেক,
প্রয়োগ বিজ্ঞানের আরও।
অনুষঙ্গে আরও একটা কথা
মধ্যবিত্ত যাপনে সেদিন মদ
অশান্তি ভয় তুমুল বেঘোর…!
বিবাহ একটি সুপ্রাচীন প্রথা।
সমাজে আজও বিদ্যমান তা।
কিন্তু প্রকৃতিতে সেখানে বিপুল বদল।
তবে মূল যে বিষয়টা
যা কিনা শেয়ার মার্কেটের মতোই অনেকটা।
সেখানে সমূহ কৌশল প্রগাঢ় অঙ্ক
প্রকৃত রেখাচিত্র ইত্যাদির পরও
‘মার্কেট ইজ অলমাইটি’
ইহাই শেষকথা।
বিবাহও অনেকটা সেইরকম।
তাই প্রযোজ্য এখানেও বেদবাক্যটা।
এছাড়াও আমাদের অজ্ঞাত যা—
আপাত সফল দাম্পত্যের আড়ালে
কত ত্যাগ তিতিক্ষা অশ্রুপাত ও বিয়োগ ব্যথা।
৪
বিস্মৃতপ্রায়
তন্ময় দেব
আমায় ভুলে যাওয়া খুবই সহজ একটি কাজ
স্বরচিত দীর্ঘ কবিতা পাঠ করতে গিয়ে কবি যেভাবে
মাঝের চারলাইন মনে করতে পারেন না,
জনপ্রতিনিধি বিস্মৃত হন তার দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি,
আমাকেও সেভাবেই ভুলে যাওয়া যায়
আমিও আপন খেয়ালে অবহেলিত ঘাসফুলের মতো
নানা রঙে ফুটতে থাকি। কারণ সুবাস ফুরিয়ে এলে
গোলাপেরও ঠাঁই হয় বিস্মরণের সরণিতে, আমারই পাশে
৫
সম্পদ
অপর্ণা সাহানা
দেখা যায়নি,
শুধুমাত্র ভোঁ শোনা যাচ্ছিল।
চারপাশের খানাখন্দ
বাড়িয়ে তোলে অসুখের তীব্রতা।
নিঃশব্দ জেনেও অন্ধকারে যাত্রা
তাপের আশায় বরফে মুখগোঁজা।
বাঁক থেকে বাঁকে ঘুরে
সঞ্চয় মুঠো মুঠো ধুলো।
৬
উড়ান
স্নেহাংশু বিকাশ দাস
বৃষ্টির শব্দ এসে দরজা খুলেছে
আর নৌকোর মাস্তুলে পঁচিশে বৈশাখের গান
ধুলো হয়ে, মেঘ হয়ে গুছিয়ে রেখেছে ক্লাসঘর
অন্ধকার লাটাইয়ের যত অলৌকিক তামাশা নিয়ে
আমরা গার্হস্থ্য উনুন ধরাব
ভাবলেশহীন গেয়ে উঠব ‘ওহ শাম কুছ অজীব থি’
এরপর বুকের ডানাগুলোকে লুকিয়ে
বজ্র-বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখব তোমার গোপন তিল-এ
সেখানেই মাঝরাত্তিরে ভেসে যাব
উড়িয়ে দেব রাধাচূড়া বন, তার ছায়াবীথিগুলি
৭
তোমাকে দিলাম
ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল
তোমাকে দিলাম রক্তরাগের আকাশ
তোমাকে দিলাম বসন্ত ঋতুর ঢেউ
তোমাকে দিলাম সদ্যোজাত বিকেল
দেওয়ার মতো ছিল অনেক কিছুই।
উঁচু টিলায় তোমার নতুন ঘর
পলাশ নামের ব্যাকুল করা সুর
যে আগুনে পুড়ছে আমার হৃদয়
পুড়ছে জেনো তোমার ভালোবাসায়।
ঝাউয়ের সারি ধূসর দিগন্তরেখা
জোয়ারভাটায় নরম জলের ঘোর
শিউরে ওঠা আদর কানায় কানায়
বিকেল তোমায় দিলাম বসন্ত ভোর।