শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

Buniadpur | পরীক্ষার ভয়ে ২দিন গায়েব, পকেট ফাঁকা হতে ফিরল পরীক্ষার্থী  

শেষ আপডেট:

অনুপ মণ্ডল, বুনিয়াদপুর: ১২ মার্চ ছিল একাদশের রসায়নের পরীক্ষা। পরীক্ষা দেওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না বছর ষোলোর  পারভেজের (নাম পরিবর্তিত)। বাড়ির শাসন এড়াতে ও ঠিক করে অন্য কোথাও চলে যাবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। ‘হারিয়ে যাবে’ বলে বুনিয়াদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে বসে পারভেজ। এদিকে ছেলে বাড়ি ফিরে না আসায় ওর পরিবারের লোকজন রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।  রাত ১০ টা পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ওই দিন রাতেই তাঁরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে, পারভেজ বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে।  দুদিন স্টেশনের ওয়েটিংরুমেই কাটিয়ে দেয় সে। কিন্তু ১৪ মার্চ সকালে তার খেয়াল হয়, পকেটের টাকা শেষ! মনে পড়ে বড়ির কথা। বাড়ি থকে পালিয়ে থাকার মোহ কেটে গিয়ে তখন তার চিন্তা, পেটের খিদে মেটাবে কীভাবে আর  বাড়িই বা  ফিরবে কী করে।  বর্ধমান স্টেশনে অসহায় অবস্থায় ঘুরতে থাকে পারভেজ।

ব্যাপারটা স্টেশনে উপস্থিত  এক মহিলার নজরে আসে।  তিনি ওর সঙ্গে কথা বলতেই পারভেজ গড়গড় করে সবটা জানিয়ে দেয়। ভদ্র মহিলা পারভেজের বাবা আজিজুর রহমানকে (নাম পরিবর্তিত) ফোন করেন। আজিজুর  শনিবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমানে ছুটে যান। বর্ধমান স্টেশন  জিআরপি’র  তত্ত্বাবধান থেকে ছেলেকে নিয়ে রবিবার বুনিয়াদপুরে ফেরেন। নিয়ে যাওয়া হয় সিডব্লিউসি’র কাছে।  সেখানে কাউন্সেলিংয়ের পর বাড়ি ফেরে পারভেজ।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করেছিল পারভেজ। তাহলে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় তার মধ্যে  ভীতি কেন কাজ করল? প্রশ্ন উঠছে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে। যদিও আজিজুর বলছেন, ‘ছোট থেকে ওর ইচ্ছা  চিকিৎসক হওয়ার। নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছিল। পড়াশোনার বিষয়ে আমাদের কিছু বলতে হয়নি কোনওদিন। আমাদের দিক থেকে পড়াশোনার বিষয়ে  কোন চাপও ছিল না।  শুধু  পরীক্ষার আগে জানতে পেরেছি কেমিস্ট্রি  টিউশন  টিচার তিনটি চ্যাপ্টার  কমপ্লিট করতে পারেনি।  ও নিজের মতো তৈরি হলেও নিশ্চয় ভীতি  কাজ করছিল।‘

মনোবিদরা বলছেন, এটা সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পর্ণাশা গুপ্ত রায় বলছেন, এই প্রজন্মের অধিকাংশ বাচ্চারা ছোট থেকে ‘সমস্যা’ বিষয়টার সঙ্গেই পরিচিত হতে পারেনা। না চাইতেই সব হাতের কাছে চলে আসে। মাঠে খেলতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মারপিট করে নিজেরাই সেটা মিটিয়ে ফেলার মধ্যেও একটা শিক্ষা থাকে। যা শিশুটির ম্যানেজিং পাওয়ার। হতাশ না হয়ে সে লড়াই করতে শেখে। কিন্তু এসবের অভাব তাকে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি সামাজিক লজ্জা, বাড়ির সম্মান এসব কিছু কাজ করে। তখন তাঁর কাছে পালানোটা শ্রেয় মনে হয়। এই পালানোর প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। পালানোর রাস্তা হিসেবে কেউ  আত্মঘাতী হয়। কেউ হয় নিরুদ্দেশ।

দক্ষিণ দিনাজপুর  সিডাব্লিউসি’র  চেয়ারপার্সন   মন্দিরা রায় বলেছেন, ছাত্রটি খুব  মেধাবী। আমরা ওকে উৎসাহ দিয়েছি। বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ কাউন্সিলিং করা হয়েছে। ওর ওপর নজর রাখা হবে।’

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

Dooars | গুড ফ্রাইডের আগে ডুয়ার্সের চার্চগুলিতে প্রস্তুতি তুঙ্গে

নাগারাকাটা: শুক্রবার গুড ফ্রাইডে (Good Friday)। তার আগে ডুয়ার্সের...

Malda | মুর্শিদাবাদের পুনরাবৃত্তি নয়, সতর্কতা মালদায়

হরষিত সিংহ, মালদা: মোথাবাড়ি (Mothabari) থেকে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) একের...

Dakshin Dinajpur | দণ্ডিকাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল, ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা প্রদীপ্তার

সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: দণ্ডিকাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রী শংকর...

Raiganj | খাবারের টানে পড়ুয়াদের ভাইবোনেরাও স্কুলে

চন্দ্রনারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জ: মিড-ডে মিল (Midday Meal) নিয়ে মাঝেমধ্যেই...