উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সাতমণ তেল পুড়লেও, রাধা নাচল না। কার্যত এই ভাষাতেই ব্যাখা করা যায় রাজ্যপালের আজকের শিলিগুড়ি সফরকে। সরাসরি দিল্লি থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছে চোপড়া সফর বাতিল করে ফিরতি বিমানে ফের দিল্লি ফিরে গেলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কারণ চোপড়ার নির্যাতিতরা কেউ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চাননি। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে দিল্লির বিমান ধরার আগে রাজ্যপাল নিজেই জানালেন, ‘ওঁরা পরেও চাইলে আমার সঙ্গে কলকাতায় রাজভবনে গিয়ে দেখা করতে পারেন। অথবা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা ভার্চুয়াল মাধ্যমে জানাতে পারেন।’ যদিও কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা থেকে নির্যাতিতা বিজেপি নেত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাজ্যপালের সঙ্গে শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে দেখা করেন।।
চোপড়ায় তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে যুগলকে মারধরের ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। পরিস্থিতি বুঝে চোপড়ার ওই তৃণমূল নেতা তাজিমুল তথা জেসিবিকে গ্রেপ্তার করে নেয় পুলিশ। সুয়োমোটো অভিযোগ দায়ের করে তদন্তও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সর্বত্র এই ঘটনার সমালোচনা শুরু হতেই চোপড়ায় আসবেন বলে ঠিক করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মাথাভাঙ্গা ও চোপড়ার ঘটনার মধ্যে চোপড়াকেই তাঁর সফরসূচিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঠিক ছিল, বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি চোপড়া চলে যাবেন রাজ্যপাল। তারপর শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে ফিরে মাথাভাঙ্গার নির্যাতিতা বিজেপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে দিল্লি ফিরবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাল কেটে যায় শুরুতেই। রাজ্যপাল জানতে পারেন, চোপড়ায় তাঁর সঙ্গে কেউই কথা বলতে রাজি নন। বরং নির্যাতিতাকে নিয়ে রাজনীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁর প্রতিবেশিরা। নির্যাতিতা মহিলার কথায়, “আমার ওই ভিডিওটা অনুমতি ছাড়া কে ভাইরাল করল। আমি তার শাস্তি চাই।”
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চোপড়া সফর তাঁর জন্য অস্বস্তির হতে পারে বুঝেই রাজ্যপাল তা বাতিল করে দিল্লি ফিরেছেন। তবে নিয়ম করে রাজ্য তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করেছেন তিনি। আর এতেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যপালের কাছে কি চোপড়ার পরিস্থিতি নিয়ে সঠিক তথ্য ছিল না? দিল্লি থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে তড়িঘড়ি শিলিগুড়িতে এসে ফের ফিরে যাওয়ায় তাঁর সফরের উদ্দেশ্যই কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।
এমনিতে রাজ্যে কোথাও সরকার বিরোধী কিছু ঘটলেই বা শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই রাজ্যপাল সেখানে পৌঁছে যান। যা নিয়ে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে কটাক্ষ করে থাকে তৃণমূল। এই দফায় যখন দুই সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়কের শপথ নিয়ে জটের এখনও কোনও সুরাহা হয়নি, তখন জট কাটাতে কোনও পদক্ষেপ না করে রাজ্যপাল চোপড়া সফরের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।।