জলপাইগুড়ি: দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকারি বাসে বসেছিল সিসিটিভি ক্যামেরা৷ সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার তৎপরতা। কিন্তু সরকারি বাসগুলির সিসিটিভির হাল কী? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে জলপাইগুড়ি ডিপোয় হাজির হতেই জানা গেল, পুরোনো প্রায় অধিকাংশ বাসেরই সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো। তবে নতুন বাসগুলির ক্যামেরা এখনও সচল রয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বাসে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে কীভাবে দোষীকে চিহ্নিত করা হবে? বেহাল সিসিটিভির ক্যামেরার কথা স্বীকার করেছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান প্রার্থপ্রতিম রায়।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের জলপাইগুড়ি ডিপো সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটে বারোটি, জলপাইগুড়ি-মালবাজার রুটে ছ’টি, জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি রুটে সাতটি বাস দৈনিক চলাচল করে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার-বারবিশা, কোচবিহার, বানারহাট, টাকিমারি-বোদাগঞ্জ রুটে রোজ একটি করে বাস চলে। দূরপাল্লার ক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি থেকে প্রতিদিন বহরমপুর, অমরপুর, ফরাক্কা, গঙ্গারামপুর, তপন, করদহ, বালুরঘাট, মালদা, কাঙ্কি, দার্জিলিং রুটে একটি করে ও দেওয়ানগঞ্জ থেকে বহরমপুর রুটে একটি বাস চলে। সবমিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৪০টি বাসে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন কয়েকশো যাত্রী। কিন্তু সেখানেই দেখা গেল নিরাপত্তার রেটিং শূন্য।
২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকার জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পে জেএনএনইউআরএম নামে যে বাসগুলি পথে নামিয়েছিল প্রথম অবস্থায় সেগুলির সিসিটিভি ক্যামেরা খুব ভালো কাজ করছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলিও ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এনিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের এক সরকারি পরিবহণকর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মীর কথায়, ‘ভিড় বাসে অনেক মহিলাকে বহু সময় দাঁড়িয়ে আসতে হয়৷ এ সময় তাঁরা কিছুটা সমস্যায় পড়েন। পরিস্থিতি আন্দাজ করে তাঁদের নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। সিসিটিভির ক্যামেরাগুলি সচল থাকলে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহিলার অভিযোগ অনুযায়ী অভিযুক্তকে সহজেই খুঁজে বের করা সহজ হত।’ তাঁর মতো মালবাজার, শিলিগুড়ি, হলদিবাড়ি রুটের বহু সরকারি বাসের চালক-কনডাক্টরদেরও একই অভিযোগ।
কর্মসূত্রে দৈনিক শিলিগুড়ি যাতায়াতকারী এক মহিলা যাত্রী বলেন, ‘নারী-পুরুষ সবারই নিরাপত্তা জরুরি। কিন্তু মহিলা হিসাবে একটাই কথা, সিসিটিভির ক্যামেরাগুলি সবার আগে সারিয়ে তোলা দরকার। বেশিরভাগ দিনই রাত ৮.৪৫-এ শিলিগুড়ি থেকে বাস ধরে আসি। আতঙ্ক তো থাকেই।’ সরকারি বাসগুলির সিসিটিভি ক্যামেরার বেহাল দশার কথা স্বীকার করেছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়। তিনি বলেন, ‘পুরোনো বাসগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। জেএনএনইউআরএম নামে চলা কিছু বাসে সমস্যা রয়েছে। তবে, দূরপাল্লার রকেট কিংবা নতুন বাসগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রয়েছে। যেসব বাসে সমস্যা আছে তা খুঁজে বের করে দূর করার চেষ্টা চলছে।’