শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (MJN Medical College & Hospital) শৌচালয় ভাঙচুরের পর এবার বয়েজ হস্টেল থেকে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা উধাওয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে ফের চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মেডিকেল কলেজে। এই ঘটনার পিছনেও চিকিৎসকদের উত্তরবঙ্গ লবির ছত্রছায়ায় থাকা পড়ুয়ারা থাকতে পারেন বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বিরুদ্ধে সোমবার শৌচালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ইতিমধ্যেই ভাঙচুরের ঘটনায় কারা জড়িত তা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলকুমার মণ্ডল বলেছেন, ‘সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। বারবার কলেজে নানা ধরনের অসংগতি আমরা লক্ষ করছি। বয়েজ হস্টেল থেকে নতুন করে আবার একটি সিসি ক্যামেরার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছি।’
এমজেএন মেডিকেলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জটিলতা লেগেই রয়েছে। প্রথমে সোমবার এমবিবিএস-এর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে চার পড়ুয়ার প্রথম খাতাটি বাতিল করে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য অন্য খাতায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন পড়ুয়ারা। নকলের অভিযোগে এক পড়ুয়ার সেদিনের পরীক্ষাটি বাতিল হয়েছে। নকল সরবরাহ বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ কড়া হওয়ায় সেদিনই একটি শৌচালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। একটি সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে শৌচালয়ে তিনজন পড়ুয়াকে ঢুকতে। তারাই ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ। সেই রেশ কাটতে না কাটতে ফের সিসিটিভি ক্যামেরা উধাওয়ের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নকলে বাধা দেওয়াতেই তার ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে মেডিকেলের অন্দরে বিশৃঙ্খলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তরবঙ্গ লবির একটি বড় অংশ এমজেএন মেডিকেলে সক্রিয় রয়েছে। লবির কয়েকজন চিকিৎসক নেতার মদতে এখানে একটি ‘গ্যাং’ সক্রিয় বলে অভিযোগ। আরজি কর কাণ্ডের পর তাঁদের কথা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেই গ্যাং খানিকটা নিশ্চুপ হয়ে গেলেও এমবিবিএস-এর পরীক্ষা শুরু হতেই ফের সেটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ, গ্যাংয়ের পক্ষে থাকা ছাত্রছাত্রীদের নকল সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল ‘সিনিয়ার’ কয়েকজন পড়ুয়ার ওপর। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িতে সেই কাজ বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরীক্ষায় নকল রুখতে প্রথম থেকেই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আটটি ক্যামেরার মাধ্যমে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। এছাড়াও অধ্যক্ষ নিজে নজরদারি রেখেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও যারা নকল সরবরাহের চেষ্টা ও ভাঙচুর করে পরীক্ষা বিঘ্নিত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মেডিকেলের এক আধিকারিক জানান, বৃহস্পতিবার মেডিকেলে কোনও পরীক্ষা না থাকলেও শুক্রবার এমবিবিএস-এর পরীক্ষা রয়েছে। সেখানেও একইভাবে কঠোর নজরদারি রাখা হবে।