উত্তরবঙ্গ

তিস্তাপারে চার লেন বৃত্তান্ত, নতুন পাহাড়ি রাস্তায় এখনই চমক

রণজিৎ ঘোষ ও অনুপ সাহা, শিলিগুড়ি ও ওদলাবাড়ি : তিস্তার হাত ধরে এঁকেবেঁকে যে রাস্তাটি সেবক থেকে রংপো চলে গিয়েছে, তা নিয়ে বাঙালির আবেগের অন্ত নেই। অনেকটাই সরু। ধস নামলে তো মাইলের পর মাইল রাস্তা যানজট হয়ে যায়। তবু তিস্তা ও পাহাড়ের অসামান্য যুগলবন্দিতে ওই রাস্তা হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রাণের রাস্তা।

সেই রাস্তা, সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এখন চার লেনের করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রক থেকে এব্যাপারে ছাড়পত্র পেয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছে পূর্ত দপ্তর। যা নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং কৌতূহল।

এসবের মাঝেই এখান থেকে সামান্য দূরে, ডুয়ার্সের বাগ্রাকোটে অন্য একটি নির্মীয়মাণ জাতীয় সড়কের কম্পিউটার গ্রাফিকস প্রকাশ্যে এসেছে। যা যাবে নাথু লা পর্যন্ত। যা নিয়ে অন্যরকম তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছে, সৌন্দর্যের বিচারে এই সড়কই কি রাজ্যের সেরা সড়ক হতে চলেছে? যা কাশ্মীর, লে, হিমাচল বা উত্তরাখণ্ডের জাতীয় সড়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অন্যতম সুন্দর জাতীয় সড়ক হয়ে উঠবে? এখানে লুপ ও ভায়াডাক্টগুলো এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ১৩ কিলোমিটার পাহাড়ি পথে উঠেও ১ কিলোমিটারের মাথায় কোন গাড়ি আছে তা স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাবে। যার কিছুটা আন্দাজ মিলছে এখনই। এক কথায় পাহাড়ে মোড়ে মোড়ে চমক।

সব ঠিকঠাক এগোলে আগামী বছরই চালু হবে নাথু লা পর্যন্ত এই সড়ক। যা বাংলা ও সিকিমে পর্যটন প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে বলে আশাবাদী পর্যটন উদ্যোগীরা। চার হাজার কোটির এই প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অনেক জায়গায় পাহাড় সম্পূর্ণ ন্যাড়া হয়ে গিয়েছে একেবারে।

সেবক থেকে রংপোর বহু পরিচিত রাস্তাটি চওড়া হলে যানজট অবশ্যই কমবে। তবে দুই পরিচিত পরিবেশকর্মী শিলিগুড়ির অনিমেষ বসু ও কলকাতার সুভাষ দত্ত একমত, এতে পাহাড়ের বড় ক্ষতি হবে। রাখঢাক না করেই তাঁদের সাফ কথা। উঠছে অন্যরকম কিছু প্রশ্ন। ১) রাস্তা চওড়া করতে গেলে পাহাড় কাটতে হবে আবার। একেই রেললাইনের টানেল করায় পাহাড়ের স্থায়িত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন। এক্ষেত্রে পাহাড়ের আরও বড় ক্ষতি হবে না তো? ২) এভাবে আঁকাবাঁকা রাস্তায় পাহাড় কাটা কতটা বাস্তবসম্মত? ৩) এ রাস্তায় ধস নিয়মিত হয়। আবার ধস নামলে কী হবে? কাজ করতেই বা কত সময় লাগবে, তখন যানজট যন্ত্রণা কী জায়গায় যাবে?

এর আগে এই রাস্তাটি বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের (বিআরও) হাতে থাকাকালীন পাহাড় কেটে রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু যে জায়গাগুলিতে পাহাড় কাটা হয়, পরবর্তী বছরই সেখানে বড় ধস নামে। ফলে ওই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে।

দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট অবশ্য এসবে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, কালিম্পং এবং সিকিমের লাইফলাইনকে যত দ্রুত সম্ভব আরও চওড়া করা প্রয়োজন। এটা বুঝেই কেন্দ্রীয় সরকার এই রাস্তা তৈরির প্রাথমিক ছাড়পত্র দিয়েছে। পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়ক বিভাগের (এনএইচ-১০) নির্বাহী বাস্তুকার সুবোধ ছেত্রী মেনে নিলেন, সমীক্ষার কাজ চলছে। এর পরে পুরো প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হবে। তাঁর কাছে জানা গেল, প্রাথমিকভাবে সাত মিটার রাস্তা বাড়িয়ে ১০ মিটার করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাহাড় কেটেই এই সম্প্রসারণ হত। কিন্তু পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাস্তাটি চার লেন করার কথা বলা হচ্ছে।

সিকিম যাওয়ার দ্বিতীয় রাস্তায়, বাগ্রাকোট থেকে পাহাড়ি পথে কিছুটা এগোতেই এখন নজরে পড়ছে ৭টি ভায়াডাক্ট ও একাধিক লুপ। যা সেরা আকর্ষণ। এনএইচআইডিসিএলের খবর, যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেশে কখনও হয়নি।  এই সড়কটি দেখতে যে পর্যটকদের ঢল বাগ্রাকোট, চুইখিম, লোলেগাঁও, আলগারা, পেডং, রোরেথাং, পাকিযং হয়ে রানিপুল প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে তা নিয়ে আশাবাদী পর্যটন উদ্যোগী রাজ বসুও। এই রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্য সবার আগে দেখা হয়েছে সেনাবাহিনীর স্বার্থ। চিন সীমান্তে নাথু লা পর্যন্ত যেতে আর আগের মতো সময় লাগবে না সেনার।

সাংসদ রাজু বিস্ট যে সেবক-রংপো রাস্তা চওড়া করার কথা বলছেন, তাতে সেনাদের সুবিধের কথাও তুলছেন। ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত রাস্তায় ২০টি ধসপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে। সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে পাহাড়ের দিকে গার্ডওয়াল দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এমনিতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এই রাস্তায় ব্যাপক ধস নামে। তবে বর্তমান রাস্তাটিও পুরো সংস্কার করা হচ্ছে। যার বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। রাস্তা ম্যাস্টিক হিসাবে তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে।

সেবক থেকে বাগ্রাকোট ঠিক ২০.২ কিলোমিটার। এর মাঝে সিকিমগামী দু-দুটো রাস্তা এখনই পাল্লা দেয় সৌন্দর্যে। সব কাজ শেষে কোন রাস্তাটা বেশি সুন্দরী হয়ে উঠবে, সেটাই এখন প্রধান কৌতূহলের বিষয় ভ্রমণবিলাসীদের কাছে।

Sourav Roy

Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.

Recent Posts

Dev’s road-show | তৃণমূল প্রার্থী প্রসূনের সমর্থনে রতুয়ায় দেবের রোড-শো, যানজটে নাজেহাল সাধারণ মানুষ

রতুয়াঃ শুক্রবার উত্তর মালদার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে রোড শো করেন অভিনেতা দেব। এদিন…

1 hour ago

Bengal Pro T20 League | উন্মোচন হল বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগের ট্রফির, প্রাক্তনীদের মঞ্চে ডেকে নিলেন সৌরভ

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হবে বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ। শুক্রবার…

2 hours ago

High Madrasah result | হাই মাদ্রাসার ফলপ্রকাশ, ৭৭৮ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম রামনগরের সাহিদুর

গাজোলঃ মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় আবার জয়জয়কার গাজোলের রামনগর হাই মাদ্রাসার। এবারে এই মাদ্রাসা থেকে রাজ্যের…

2 hours ago

Achievement | ক্যানসার জয় করে মাধ্যমিকে সফল দিনহাটার রাখি, ছাত্রীর কৃতিত্বে খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ

দিনহাটাঃ শরীরে বাসা বেধে ছিল মারণ রোগ ক্যানসার, কিন্তু তাতে দমানো যায়নি দিনহাটা জ্ঞানদাদেবী গার্লস…

3 hours ago

সেতুর কাজ করতে গিয়ে ক্রেনের তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনা, জখম ৩ শ্রমিক

গয়েরকাটা: সেতুর কাজ করতে গিয়ে ক্রেনের তার ছিঁড়ে স্টিলের গার্ডারে চাপা পড়ে গুরুতর জখম হলেন…

3 hours ago

Madhyamik Result | বাবা ঠিকা শ্রমিক, সৌরদ্বীপের পড়াশোনায় অন্তরায় আর্থিক অনটন

জামালদহ: এক কামরার ভাড়া বাড়ি। পাশেই চলে রান্নাবান্না। বাবা ঠিকা শ্রমিক। বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে কিংবা…

3 hours ago

This website uses cookies.