ভাস্কর শর্মা, জয়ন্তী: আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমাকে বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই। আমি এখনও শেষ হয়ে যাইনি। তোমরা পাথর সরিয়ে আমাকে বের করো। ব্রিটিশ ভারতে জয়ন্তীর শেষ সাক্ষী জয়ন্তী ব্রিজের চারটি পিলার এভাবেই যেন নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে চাইছে। প্রতি বছর একটু একটু করে পাথর চাপা পড়ে আজ প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে জয়ন্তী ব্রিজের শেষ স্মৃতিচিহ্ন। শতবর্ষ পার করা এই ব্রিজের চারটি পিলার আজও ব্রিটিশ ভারতের সাক্ষ্যবহন করে চলছে। ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় জয়ন্তী ব্রিজ। তারপর থেকে শুধুই দু’হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের চারটি পিলার। এই পিলারও আজ ধ্বংসের মুখে। পরিবেশ আদালতে জয়ন্তী নদী নিয়ে মামলা থাকায় করা যাচ্ছে না নদীর ড্রেজিং। ফলে আজ নদীর দু’পাশের তুলনায় নদীবক্ষ অনেকটাই উঁচু হয়ে গিয়েছে। আর নদীর বালি-পাথরে চাপা পড়তে পড়তে জয়ন্তী ব্রিজের ওই চারটি পিলার ইতিহাস হওয়ার পথে।
ইতিহাসপ্রেমীরা মনে করছেন, এবার বড় ধরনের হড়পা নামলেই উড়ে যেতে পারে জয়ন্তী ব্রিজের চারটি পিলার। ইতিহাসপ্রেমী নীতীশ দাস বলেন, ‘ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনেক কিছুই আলিপুরদুয়ার থেকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। বাবুপাড়ার জেলখানা আজ নেই, বক্সায় ব্রিটিশদের তৈরি অনেক কিছুই ধ্বংস করা হয়েছে। জয়ন্তী ব্রিজটিও আমরা রাখতে পারলাম না।’ জয়ন্তীর বাসিন্দা শেখর ভট্টাচার্যর কথায়, নদীর বালি-পাথরে চাপা পড়তে পড়তে জয়ন্তী ব্রিজের পিলার চারটিও একেবারে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণত পাহাড়ি নদী জয়ন্তীতে সারা বছর জল থাকে না। বৃষ্টি হলে জল নেমে আসে। তবে তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না। কিন্তু ভরা বর্ষায় নদী পারাপার সম্ভব ছিল না। তাই ব্রিটিশ আমলে পারাপারের জন্য নদীর ওপর রোপওয়ে বানানো হয়েছিল। এই রোপওয়ের মাধ্যমেই সে সময় মানুষ চলাচল করতন। ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে জয়ন্তী নদীর উপর সেতু তৈরির কাজও শুরু করে দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। মাত্র এক বছরের মধ্যেই ওই সেতু তৈরির কাজ শেষ করে তারা। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে সাধারণের জন্য ওই সেতু খুলে দেওয়া হয়। সেতুটির মুখ্য স্থপতি ছিলেন অসওয়াল্ড সার্জেন্ট স্মিথ নামে এক ইঞ্জিনিয়ার। স্থায়ী সেতু তৈরির পর বদলাতে থাকে জয়ন্তী। এখানকার খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে একটা বিশাল বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয় জয়ন্তী।
ইতিহাসপ্রেমীদের কথায়, ১৯৯৩ সালে জয়ন্তীর বুকে নেমে আসে বড় বিপর্যয়। সেবার ভয়ংকর বন্যায় গোটা জয়ন্তী সহ আলিপুরদুয়ারের সব ইতিহাস ওলটপালট হয়ে যায়। বন্যার পর দেখা যায় জয়ন্তী ব্রিজ সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। শুধুমাত্র তার চারটি পিলার দাঁড়িয়ে থাকে।