ব্যুরো রিপোর্ট: মালদায় (Malda) জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি বাবলা সরকার প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হতেই জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তোপ দেখেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এরপর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গৌড়বঙ্গের প্রায় সব পুরসভার পুরপ্রধানদের নিরাপত্তার (Chairman’s Security) ব্যবস্থা করা হল। রাজ্যজুড়ে পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও বেশকিছু কাউন্সিলরদের নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়। তাঁদের সর্বক্ষণের নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রত্যেক পুরপ্রধানের নিরাপত্তায় আপাতত একজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে। তবে বালুরঘাট, বুনিয়াদপুরে পুরপ্রধানদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এখনও কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে বামফ্রন্টকে সরিয়ে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। প্রথমবার পুরভোটে জিতেই পুরপ্রধান হন জেলার দাপুটে নেতা তথা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের ভাই প্রশান্ত মিত্র। ২০২২ সালে পুরনির্বাচনে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। বিপ্লবের ভাই প্রশান্তের ওপরে ভরসা রাখে রাজ্য তৃণমূল। প্রায় আট বছর পুর প্রধানের দায়িত্বে থাকা প্রশান্ত বাবুর এদিন কোনো নিরাপত্তারক্ষী লাগেনি। নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে যেতেন। ঘুরে বেড়াতেন শহরের এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। কিন্তু গত চার দিন আগে দিনের বেলায় বাড়ির পাশে গুলি করে খুন করা হয় মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহসভাপতি তথা কাউন্সিলার দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে। বাবলা বাবুর নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। দিনের বেলায় মালদার প্রথম সারির তৃণমূল বাবলা সরকারের খুনের ঘটনার পর থেকে নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্ধেগ দেখা দেয়। এরপরে রাজ্য সরকারের তরফে পুরপ্রধানদের নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়। সেই মত গঙ্গারামপুরের পুরপ্রধান প্রশান্ত মিত্রকে দেওয়া হল নিরাপত্তারক্ষী। এদিন সকালে প্রশান্তবাবু নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান।
গঙ্গারামপুরের (Gangarampur) পুরপ্রধান প্রশান্ত মিত্র বলেন, ‘সম্প্রতি মালদায় একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর সরকারের তরফে আমাকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত দুর্ঘটনাগুলি ঘটছে, সেই কারণে হয়তো অন্য পুরপ্রধানের সঙ্গে আমাকেও নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছেন। প্রায় সব পুরপ্রধানদের ক্ষেত্রেই এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্ভবত প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ ডালখোলার পুর চেয়ারম্যান তৃণমূলের স্বদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘এতদিন আমার নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। তবে থানা থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। তাই রবিবার নিরাপত্তারক্ষীর আর্জি লিখিতভাবে পুলিশকে দিয়েছি।’
পুর চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘আমার নিরাপত্তার জন্য একজন দেহরক্ষী পাঠানো হয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এদিকে জেলা পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে কালিয়াগঞ্জের পুরপ্রধান রামনিবাস সাহাও দেহরক্ষী পেলেন। সোমবার সকাল থেকে পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা যায় দেহরক্ষীকে। পুরপ্রধান রামনিবাস সাহা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই আমার। তাই, দেহরক্ষী নিতে হল।’ রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারপার্সন সন্দীপ বিশ্বাস ও ভাইস চেয়ারপার্সন অরিন্দম সরকারের বহু দিন ধরেই সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন অরিন্দম সরকারের দাবি, ‘আমরা দুইজনই নিরাপত্তারক্ষী পাই। তবে নিরাপত্তারক্ষী জীবন বাঁচাতে পারে না। সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও দুস্কৃতীদের হাতে প্রাণ গেছে অনেকের। সাধারণত দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই খুনের ঘটনা ঘটছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন।’