কোচবিহার: আগে ঘরে-বাইরে বিবাহিত মেয়েদের কপালে সিঁদুরের টিপ আর সিঁথিতে সিঁদুর ছিল ভীষণ স্বাভাবিক ব্যাপার। সিঁদুরের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল নানা সংস্কার। সময় বদলেছে। বদলেছে সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে রাখার অভ্যাস। তবে সিঁথির সিঁদুরে বিবাহিতের চিহ্ন কিছুটা হলেও রয়েছে এখনও।
শুধু সিঁদুর পরায় নয়, সেইসঙ্গে বদল এসেছে সিঁদুরেও। একটা সময় সিঁদুর বলতে গুঁড়ো সিঁদুরই বোঝা যেত। সেই গুঁড়ো সিঁদুর কৌটোয় আর পাতায় করে পাওয়া যেত দোকানে। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে সিঁদুরও অনেকটাই আধুনিক হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার যুগে সেই গুঁড়ো সিঁদুরে এসেছে পরিবর্তন। চালু হয়েছে ভেষজ গুঁড়ো সিঁদুর। তারপর বাজারে এল লিকুইড সিঁদুর। লিকুইড সিঁদুর আবার লাল, মেরুন দু’রকম রঙেই পাওয়া যায়।
কোচবিহারের নামকরা স্টেশনারি দোকানের কর্ণধার ঋতব্রত দাস জানালেন, ‘আমাদের দোকানে সাধারণত দেখা যায় হারবাল গুঁড়ো সিঁদুর মা-কাকিমাদের বয়সিরাই বেশি কেনেন। বাকি অল্পবয়সি যাঁরা তাঁরা সকলেই লিকুইড সিঁদুরটাই পছন্দ করেন। তাই সেটারই কাটতি বেশি। আর সাধারণ গুঁড়ো সিঁদুরের কৌটো পুজো বা এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বেশি বিক্রি হয়।’ বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে এই লিকুইড সিঁদুরের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আজকাল আর মেয়েদের ড্রেসিং টেবিলে দেখতে পাওয়া যায় না রুপোর সিঁদুরের কৌটো আর ছিটা। যা এক সময় প্রত্যেকের ড্রেসিং টেবিলেই শোভা পেত।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককর্মী অঙ্কিতা কুণ্ডুর কথায়, ‘পুজো বা সেরকম কোনও অনুষ্ঠানে অবশ্যই বেশ গাঢ় করে সিঁদুর দিই। কিন্তু সাধারণত এখন আর তেমনভাবে সবসময় গাঢ় করে সিঁদুর পরা হয় না। গুঁড়ো সিঁদুর তো ব্যবহার করি না, অফিসে আসার সময় অল্প লিকুইড সিঁদুর দিয়ে আসি।’
একসময় সাধারণ সিঁদুর ব্যবহার করতেন সোমা দাস। কিন্তু সেই সিঁদুরের মধ্যে পারদ ও সিসা মেশানো থাকায় সেটি ব্যবহার করলেই সিঁথিতে চুলকানো শুরু হয়ে যেত। সেখানে চুলও ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ‘তাই আজকাল একটি বিশেষ কোম্পানির হারবাল গুঁড়ো সিঁদুরই ব্যবহার করি’, জানালেন তিনি।
সূর্য সেন রোডের গৃহবধূ রিকি সরকার সেন বললেন, ‘বিয়ের পর প্রথমদিকে গুঁড়ো সিঁদুর ব্যবহার করলেও এখন লিকুইড সিঁদুরই সব সময় লাগাই। গুঁড়ো সিঁদুর সিঁথিতে দিলে একটু পরেই ছড়িয়ে যায়। কিন্তু লিকুইডে সেই সমস্যাটা থাকে না। এতে মুখ ধুলে উঠে যায় আবার প্রয়োজন মতো লাগিয়ে নিই। পুজোর সময় ব্যাপারটা আলাদা, তখন গুঁড়ো সিঁদুর ছাড়া সাজ অসম্পূর্ণ মনে হয়।’
এখনও সাধারণ সিঁদুরের কৌটোই ব্যবহার করেন টেম্পল স্ট্রিটের দেবযানী রায়। বললেন, ‘প্রতিদিন স্নানের পর সিঁথিতে সিঁদুর অবশ্যই ছোঁয়াই। প্রথম থেকেই দিয়ে আসছি সেই অভ্যাসটা এখনও রয়ে গিয়েছে। তবে আমি কখনোই খুব গাঢ় করে সিঁদুর দিই না। তাই হয়তো সিঁদুরে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি।’
তবে সিঁদুরে যে একটা বিপ্লব এসেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আজকাল সিঁথি ভরে সিঁদুর পরা খুব একটা দেখা যায় না। সিঁথির সামনে সিঁদুর দেওয়াটাই এখন বেশি চলছে। সবসময় বেশি করে সিঁদুর না দিলেও দুর্গাপুজোয় বিজয়া দশমীর দিন যে সিঁদুর খেলা হয়, সেখানে কিন্তু সাধারণ বাজার চলতি গুঁড়ো সিঁদুর গুনে গুনে ১০ গোল দেয় আধুনিক লিকুইড সিঁদুরকে।