রাজু সাহা, শামুকতলাঃ এ যেন কলি যুগের বাল্মীকি। ছিলেন চোলাই বিক্রেতা, পেশা বদলে এখন শিক্ষার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠছেন তিনি। চোলাই বিক্রির বদলে এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াবেন।
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন বদলে যাওয়া তার? কুমারগ্রাম ব্লকের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল ঘেরা শিল্টিং বনবস্তির দরিদ্র পরিবারের যুবক মহেশ রাভা। বয়স ৩০। বাবা কাজ করার ক্ষমতা হারানোর পরেই মাধ্যমিক পাশ মহেশের কাঁধে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। অন্য কোন কাজ না পেয়েই চোলাই বিক্রি শুরু করেন মহেশ। তখন সে না বুঝেই এই ব্যবসায় নেমে পড়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকবার পুলিশ এবং আবগারি দপ্তরের অভিযানের পর সে অনুভব করে যেহেতু এই ব্যবসা অসৎ তাই এমন ব্যবসা সে করবে না। এই ব্যবসা করলে সমাজে তার সম্মানহানি হতে থাকবে। এরই মধ্যে শামুকতলা থানার ওসি জগদীশ রায়ের বার্তা তার কাছে পৌঁছয়। এই কারবার ছাড়লে তাকে অন্য পেশায় ফেরার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় সাহায্য করবেন ওসি। সেটা জানার পরেই মহেশ সিদ্ধান্ত নেন আর চোলাই বিক্রি নয়। গ্রামের সবাইকে সে কথা জানিয়ে দেন তিনি। এখন থেকে গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চাদের তিনি পড়াতে চান। তার বিনিময়ে সবাই তাকে যে যে যা পারবে সেই পরিমাণ টাকা দেবে। সেই টাকা দিয়েই সে সংসার চলবে তার।
গ্রামের সবাই তার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এরপর এই গ্রামের দুজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার শামুকতলা থানায় চলে আসেন মহেশ। থানায় লিখিত আকারে তার এই পেশা বদলের মুচলেকা দেন তিনি। সেখানে তিনি লিখেছেন, এখন থেকে আর তিনি চোলাইয়ের কারবার করবেন না। বরং চোলাইয়ের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করবেন। পাশাপাশি চোলাইয়ের কারবার বন্ধে পুলিশকেও সর্বতভাবে সহায়তা করবেন।
মহেশ জানান, ‘সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার জন্য আমার মনে হয়েছে আমার পেশা বদল একান্ত জরুরী। অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু না বুঝতে পেরেই এতদিন চোলাই বিক্রি করেছি। এখন আমি গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের পড়াতে চাই। প্রাইভেট টিউশন করে যে টাকা আয় হবে তাতেই সংসার চালাব।’
মহেশের এমন পেশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে গ্রামের সবাই রীতিমতো খুশি। ওই গ্রামের বাসিন্দা বিনয় রাভা, অনন্ত রাভা জানান, ‘মহেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সত্যিই খুব প্রশংসনীয়। আমরা ওর পাশে আছি।’
শামুকতলা থানার ওসি জগদীশ রায় জানান, ‘চোলাই এর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানোর পাশাপাশি আমরা গ্রামে গঞ্জে বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম যাতে চোলাই কারবার থেকে তারা ফিরে আসেন। সেই বার্তা পেয়েই মহেশ থানায় এসে হলফনামা দিয়ে চোলাই বিক্রি থেকে সরে আসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাচ্ছি। মহেশকে অনুসরণ করে বাকিরাও এই সিদ্ধান্ত নেবেন এই আশা করছি।’
শামুকতলা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, চোলাই এর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান তো চলছেই। তার পাশাপাশি শামুকতলা থানার ওসি জগদীশ রায় চোলাই কারবারিদের সেই কারবার থেকে সরে আসার বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন প্রতিনিয়ত। সেই বার্তায় যে এত তাড়াতাড়ি ফল মিলবে সেটা ভাবতেও পারেননি ওসি নিজেও।