শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসতেই শিলিগুড়ি লাগোয়া বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া রহস্যময় চিনা প্রকল্পের কাজ ফের চালু করতে তোড়জোড় শুরু হল। চিকেন নেক ঘেঁষে শিলিগুড়ি শহরের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ন’মাস আগে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল একটি চিনা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আড়াই হাজার কোটি বিনিয়োগে চিকেন নেকের কাছে মেডিকেল কলেজের নামে বিশেষ গবেষণাগার তৈরির পরিকল্পনা করেছিল চিন। ঘটা করে উদ্বোধন হলেও ভারতীয় কূটনৈতিক চালে মাঝপথেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সুযোগ বুঝে সেই প্রকল্প ফের চালু করতে চাইছে চিন। সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে তিনবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছে চিনা সংস্থার কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পাশে দাড়িয়াপাড়া এলাকায় ৩২ একর জায়গাজুড়ে মেডিকেল কলেজ ও গবেষণাগার তৈরির কাজ শুরু করেছিল চিনা সংস্থা। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। যেখানে প্রকল্প হচ্ছে সেখান থেকে ফুলবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। আর জলপাইগুড়ির চাউলহাটির দূরত্ব মেরেকেটে ২৫ কিলোমিটার। চিনা প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ২০২৩-এর ৮ এপ্রিল প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে ঢাকার দূতাবাসের চিনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়ে সহ একাধিক চিনা প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
চিনের ওই রহস্যময় প্রকল্পের চেয়ারম্যান হলেন চিনা ব্যবসায়ী ঝুয়াং লিফেং। তিনিই মূল বিনিয়োগকারী। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছিল বাংলাদেশে চিনপন্থী হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ-চিন মৈত্রী কেন্দ্রের তৎকালীন মহাসচিব এইচএম জাহাঙ্গির আলম রানাকে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রকল্পের কাজের নামে ফের সীমান্তে ঘাঁটি করতে শুরু করেছেন একদল চিনা ইঞ্জিনিয়ার। প্রকল্পস্থলে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের জেলে বন্দি জঙ্গিরা বর্তমানে মুক্ত। গোপন পথে চিন থেকে টনটন যুদ্ধাস্ত্র ঢুকছে ভারতে। ভারতীয় সীমান্তে যুদ্ধ মহড়া শুরু করেছে বাংলাদেশি সেনা। এই পরিস্থিতিতে চিকেন নেকের কাছে নতুন করে চিনা তৎপরতায় চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
এক দেশের ব্যবসায়ীদের অন্য দেশে বিনিয়োগ নতুন ঘটনা নয়। তবে শিলিগুড়ি করিডর ঘেঁষে চিনা বিনিয়োগের পেছনে বড়সড়ো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। নেপাল ও ভুটানকে ব্যবহার করে চিন যে ভারতবিরোধী নানা পরিকল্পনা ছকছে সেকথা আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। বাংলাদেশেও সক্রিয় ভারতবিরোধী একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী। চিন কি চিকেন নেক ঘিরে ফেলতে নয়া পরিকল্পনা করছে? এই প্রশ্নই ঘুরছে ভারতীয় গোয়েন্দা মহলে। সীমান্তের কাছে চিনা প্রকল্প নিয়ে সতর্ক রয়েছে বিএসএফ। বিএসএফের এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, ‘ওই প্রকল্প ফের শুরু হচ্ছে বলে খবর মিলেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।’ সূত্রের খবর, প্রকল্প চত্বর পরিষ্কার করার জন্য পঞ্চগড়ের দুজন ঠিকাদারকে ইতিমধ্যেই বরাত দিয়েছে চিনা সংস্থা। স্থানীয় একটি হোটেল ভাড়া নিয়ে কয়েকজন চিনাকর্মী এলাকায় থাকতেও শুরু করেছেন।
প্রকল্পের যে ম্যাপ ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে তাতে হাসপাতালের পরিকাঠামোর বাইরেও কলেজ চত্বরে বেশ কয়েটি হোটেল তৈরি হবে। চিনের নাগরিকদের জন্য তৈরি হবে আলাদা বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংগুলো কীজন্য তৈরি হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। দু’দিন আগে ২৫-৩০ জনের একটি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। ড্রোন উড়িয়ে ছবি, ভিডিও তোলা হয়। সেনা গোয়েন্দারাও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন।