কোচবিহার: কয়েকমাস আগেও দিনে ১১০-১২০টি শিশু জন্মাত। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে সত্তর-পঁচাত্তরে। পরিসংখ্যানটা কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে শিশুজন্মের হার। অন্যদিকে, এখন সেটা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এর প্রথম এবং প্রধান কারণ হল মহকুমাগুলো থেকে রেফারের সংখ্যা কমে যাওয়া, বললেন এমজেএনের এমএসভিপি সৌরদীপ রায়। এছাড়া রাজ্য সরকারের তরফে জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপর নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে, সেটাও একটা কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
তাঁর বক্তব্য, ‘মহকুমা হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে দিনহাটা এবং মাথাভাঙ্গায় বর্তমানে নর্মাল এবং সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। সে কারণে ওই এলাকাগুলি থেকে কোচবিহারে আসছেন না অন্তঃসত্ত্বারা।’
দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের সুপার রণজিৎ মণ্ডলের গলাতেও শোনা গেল একই সুর। তিনি জানালেন, ২০২৪-’২৫ আর্থিক বছরে রাজ্যে জন্মহারে দিনহাটা মহকুমা প্রথম হয়েছিল। ৬ হাজার ৪৪৯টি শিশুর জন্ম হয়েছিল এই হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ১৪৬টি নর্মাল ডেলিভারি এবং ২ হাজার ১১৩টি শিশু সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়েছিল। তাঁর দাবি, যা এক বছর আগেও ভাবাই যেত না।
২০২২ সালে মাথাভাঙ্গা হাসপাতালে কাজে যোগ দেন সুপার মহম্মদ মাসুদ হাসান। সেসময় তিনি দেখেছিলেন, অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে তিরিশ শতাংশকে রেফার করা হত কোচবিহার সদরে। এখন সেটা কমে তিন থেকে চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাঁর কথায়, ‘মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালে রাত দশটা পর্যন্ত সিজারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রাতের দিকে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বাদে অন্য কোনও রোগী রেফার করা হয় না। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে অন্যান্য মহকুমার মধ্যে আমাদের রেফার সবচেয়ে কম।’
ছবিটা আবার একটু আলাদা তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে। ছয় মাস আগেও ওই হাসপাতালে ৪০-৪২টা সিজার হত, কিন্তু এখন তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার মৃণালকান্তি অধিকারী জানান, এখানে নর্মাল ডেলিভারি হচ্ছে। সমস্যাটা হচ্ছে দুজন অ্যানাস্থেটিস্ট নেই। ফলে সপ্তাহে তিনদিন সিজার করানো হচ্ছে একজনকে দিয়েই। সুপারের কথায়, ‘যাঁদের এমার্জেন্সি সিজার করতে হবে, তখন অ্যানাস্থেটিস্ট না থাকলে রেফার করে দিতে হয় কোচবিহারে।’ অন্যদিকে, দূরত্ব কম হওয়ায় মেখলিগঞ্জ হাসপাতালের রোগীদের সাধারণত পাঠানো হয় জলপাইগুড়িতে।
রেফার ছাড়াও আরও যে কারণটি উঠে এল সেটি হচ্ছে নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপর নজরদারি। কোচবিহারের সিএমওএইচ হিমাদ্রিকুমার আড়ির বক্তব্য, নিয়মিত ভ্যাসিকটমি হচ্ছে। সেইসঙ্গে মহিলাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সাপ্তাহিক পিল বিলি করা হচ্ছে। ফলে কিছুটা হলেও জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সচেতন হয়েছেন মানুষ।
এছাড়া, বিভিন্ন নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেওয়ায় অনেকেই আজকাল সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে সেখানে যাচ্ছেন। এসব বিভিন্ন কারণে কিছুটা হলেও কমেছে শিশুজন্মের হার। এমজেএনে মাতৃমার দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ সাহা। তিনি জানালেন, চিকিৎসকের খামতিও রয়েছে। ১২ জন চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ছয়জনকে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে।