প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: শিশুশ্রম যে দণ্ডনীয় অপরাধ, সেকথা বারবার প্রচার করা হয় প্রশাসনের তরফ থেকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে বিভিন্ন দোকানপাট থেকে শুরু করে কারখানা বা বাড়িতেও নির্বিচারে নাবালক-নাবালিকাদের দিনভর হাড়ভাঙা খাটনি খাটিয়ে নেওয়া হয় নামমাত্র পারিশ্রমিকের লোভ দেখিয়ে। আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) শামুকতলা ডাঙ্গির এক নাবালিকার কাহিনীর শুরুটা সেরকমই হলেও শেষটা হল অন্যভাবে। তাকে দিয়ে পরিচারিকার কাজ করানোর জন্য অসমের (Assam) এক পরিবারকে ২ লক্ষ ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে প্রশাসন। সেই টাকা জমা পড়েছে সেই নাবালিকার অ্যাকাউন্টে।
ডাঙ্গির সেই মেয়েটিকে পরিচারিকার কাজে বহাল করেছিল অসমের জালুকবাড়ি এলাকার এক পরিবার। প্রায় চার বছর সেখানে কাজ করে ওই নাবালিকা। বিষয়টি নজরে আসতেই সেই পরিবারের কর্তার বিরুদ্ধে শিশুশ্রম আইনে অভিযোগে দায়ের করা হয়। অভিযুক্তকে জরিমানা করে গুয়াহাটির কামরূপ মেট্রো সিডব্লিউসি। মেয়েটিকে সেই পরিবারের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বছরখানেক আগেই। দীর্ঘদিন অসমেই প্রশাসনের নজরদারিতে হোমে ছিল সে। তবে হোলির আগে আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি’র হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি কর্তৃপক্ষ ওই নাবালিকাকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে। এখন বাড়িতেই রয়েছে সে।
আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি’র চেয়ারম্যান অসীম বসু বলেন, ‘শিশুশ্রম আইনে কেউ অভিযুক্ত হলে আর্থিক জরিমানা করা হয়। এই ধরনের কড়া পদক্ষেপ করলে শিশুশ্রমিক (Child Labour) সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে মনে করছি।’
প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে শামুকতলার ওই নাবালিকা অসমের পরিবারে পরিচারিকার কাজে যোগ দেয়। অভিযোগ পাওয়ার পর কামরূপ মেট্রো সিডব্লিউসি ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে হোমে রাখার ব্যবস্থা করে। খোঁজখবর নেওয়ার পর প্রায় চার বছর কাজ করার প্রমাণ মেলে। তারপরেই অভিযুক্ত মালিকের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই নাবালিকাকে প্রায় এক বছর আগেই কামরূপ মেট্রো সিডব্লিউসি উদ্ধার করেছিল। তবে তার বার্থ সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কিছুই ছিল না। ফলে তখন সেই জরিমানার টাকা তাকে দেওয়া সম্ভব ছিল না। অসমের হোমে রেখেই তাকে সেলাই সহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে জরিমানার টাকা দেওয়া হয়েছে। শেষপর্যন্ত ওই নাবালিকার বাড়ির খোঁজখবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি’র হাতে তুলে দেওয়া হয়। কামরূপ মেট্রো সিডব্লিউসি’র চেয়ারপার্সন জিতু দত্ত বলেন, ‘অভিযুক্ত মালিককে শিশুশ্রম আইন মেনে আর্থিক জরিমানা করা হয়। আর মেয়েটিকে বিভিন্ন ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে ও বাড়ি ফিরতে চায়।’
মেয়েটির মা নেই। বাবা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। জরিমানার মোটা অঙ্কের টাকা তার পরিবারের কাজে লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৪ বছরের কমবয়সি কাউকে কাজ করালে তা শিশুশ্রম আইনের মধ্যে পড়ে। জানিয়েছেন ডামরি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অলোক ভৌমিক। চা বাগান ও প্রান্তিক এলাকার কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন জায়গায় কাজে নিযুক্ত করার প্রবণতা রয়েছে। অনেক সময়ই তাদের যৎসামান্য টাকা দেওয়া হয়। কয়েক বছর কাজ করার পরেও তাদের খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। তবে সিডব্লিউসি’র নজরে এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।