শক্তিপ্রসাদ জোয়ারদার ও খোকন সাহা, কিশনগঞ্জ ও বাগডোগরা: অপারেশন সিঁদুরের মধ্যেই ভারতে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়ল ৪ চিনা নাগরিক। বিহারের ভারত-নেপাল সীমান্তের রকসোল মৈত্রী সেতুর উপর থেকে ওই ৪ চিনা নাগরিককে গ্রেপ্তার (Chinese Citizens Arrested) করে এসএসবি (SSB)। তাদের সঙ্গে পাক-যোগ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ধৃতদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ঘেঁটে পাকিস্তানের বেশ কিছু মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছে। অপারেশন সিঁদুর-এ ‘বিষদাঁত’ ভাঙলেও পাকিস্তান যে ‘ছোবল’ দেওয়ার চেষ্টা করবে, সেই আশঙ্কা থেকে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে গোটা বাগডোগরা বিমানবন্দর এলাকাতেও।
ডেন বিজোন, লি উনাঘাই, হি কিউ হেনসেন ও হুবগাং লিভিং নামে ওই চিনা নাগরিকরা চারটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে। তারা শুধু মান্দারিন ও ইংরেজিই নয়, হিিন্দ ও নেপালিতেও কথা বলতে পারে। পুলিশি জেরার মুখে তারা বারবার নিজেদের বয়ান বদলাচ্ছে। ধৃতরা সবাই চিনের হুনান প্রদেশের বাসিন্দা। বুধবার রাতে ধৃতদের বিহারের মোতিহারী থানার পুলিশের হেপাজতে তুলে দেয় এসএসবি। তদন্তকারীদের অনুমান, ধৃত চিনা নাগরিকদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের পর ভারত-নেপাল সীমান্তে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে অবৈধভাবে চার চিনা নাগরিকের ঢোকার চেষ্টায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। ৪ চিনা নাগরিককে পুলিশ, এসএসবি ও গোয়েন্দা সংস্থা গোপন স্থানে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জেরায় জানা গিয়েছে, রকসৌলের মৈত্রী সেতুর উপর থেকে মোবাইলে পাকিস্তানের এক তরুণের সঙ্গে কথা বলেছিল ডেন, লি, হি ও হুবগাং। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই চার চিনা নাগরিক নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ছিল। কিন্তু তারা কেন হঠাৎ ভারতে অনুপ্রবেশ করল, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারী দলকে।
পূর্ব চম্পারনের (মোতিহারী) পুলিশ সুপার স্বর্ণ প্রভাত জানিয়েছেন, নেপাল থেকে হেঁটে ভারতে ঢুকেছিল ওই চার চিনা নাগরিক। ধৃতদের হেপাজত থেকে ৮০০০ চিনা নোট, চারটি পাসপোর্ট, চারটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। মোতিহারী জেলার হরেইয়া থানার আইসি কিশনকুমার পাসোয়ান বলেন, ‘ধৃতদের বিভিন্ন এজেন্সি ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বিনা ভিসায় তারা কেন ভারতে অনুপ্রবেশ করছিল, তাদের কী উদ্দেশ্য ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। আদালতের নির্দেশে ধৃতদের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেপাজতে মোতিহারী সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হবে। ২০২১ সালেও উত্তরবঙ্গের মালদা সীমান্ত দিয়েও ভারতে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল এক চিনা নাগরিক। হুন জুনওয়েই নামে ওই চিনা নাগরিক যে চিনা চর, সেবিষয়ে নিশ্চিত পুলিশ।
পহলগামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরই সকলের অগোচরে বাগডোগরায় বায়ুসেনায় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অপারেশন সিঁদুরের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সেই ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। এখানকার বায়ুসেনা বিমানঘাঁটি এবং সামরিক বিভাগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই সামরিক বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যাঁরা ছুটিতে ছিলেন, তাঁদের ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বায়ুসেনা এবং স্থলসেনা যৌথভাবে একটি বৈঠক করে বাগডোগরা বায়ুসেনার অর্জুনপথ গেট সংলগ্ন অডিটোরিয়ামে। বৈঠকে পুলিশ, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের ডাকা হয়। কোনও অচেনা লোক দেখলে বা গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বাসিন্দারা যাতে বিষয়টি পুলিশের নজরে আনেন, সেই অনুরোধ করা হয় সামরিক বাহিনীর তরফে। তবে বিমান চলাচলে কোনও প্রভাব পড়েনি। বাগডোগরা বিমানবন্দরের সিনিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সুভাষচন্দ্র বসাক বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৩৪টি বিমান বাগডোগরা থেকে চলাচল করছে।’