বিশ্বজিৎ প্রামাণিক, পতিরাম: উন্মুক্ত সীমান্ত। এক-দুই কিলোমিটার নয় অন্তত সাত কিলোমিটার। মাদক ও মানব পাচারের ‘সেফ প্যাসেজ’ দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের ওই অংশটি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের উদ্বেগের মূল কারণ। ওই এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার নিয়ে সিআইডির তদন্তের জেরে যথেষ্ট শোরগোল তৈরি হয়েছে। তিনজন স্থানীয় বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতায় তলব করেছেন তদন্তকারীরা।
ওই রুটকে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর ধরে পাচার চলছিল বলে অভিযোগ। সিআইডি তদন্তের সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, সীমান্তের এই অংশটি মাদক পাচার এবং চোরাপথে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
এই ঘটনায় কুমারগঞ্জের সমজিয়া এলাকায় বাসন্তী ও বালুপাড়া গ্রামের তিন বাসিন্দা জাকির হোসেন মণ্ডল, নাজমুল মণ্ডল ও জাহিদুল সরকারকে কলকাতার ভবানী ভবনে তলব করা হয়েছে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর তাদের সিআইডি’র সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, তলব হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে জাহিদুল সরকারের স্ত্রী রেবেকা সরকার সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য। এই বিষয়ে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মোকারাম হোসেন কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পাচার চক্রের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। কুমারগঞ্জ থানার আইসি রামপ্রসাদ চাকলাদার জানান, ‘বিষয়টি কলকাতার ভবানী ভবনের আওতায় রয়েছে।’ এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু চক্রও এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি মাঝেমধ্যেই তারকাঁটা কেটে দেওয়ার মতো ঘটনাও সামনে আসে।
সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও পাচার চক্রের ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘তৃণমূল ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতার বসানোর জমি দিতে টালবাহানা করছে। রোহিঙ্গা এবং জামাত সমর্থক মুসলিমদের ঢোকানোর মাধ্যমে তারা নিজেদের ভোটব্যাংক মজবুত করছে। গোটা রাজ্যে সীমান্তে বিএসএফের নতুন ঘাঁটি তৈরিতেও জমি দিচ্ছে না রাজ্য সরকার।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাম ও কংগ্রেস দলও এই কাজে সহযোগিতা করছে।
অন্যদিকে, জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল জানান, ‘সিআইডি তিনজনকে তলব করেছে এবং তদন্ত চলছে। কাঁটাতারবিহীন এলাকায় কাঁটাতার বসানোর বিষয়টি প্রশাসনের অন্য স্তরে আলোচনা হচ্ছে।’