আবু কালাম আজাদ, মানিকচক: আবাসের তালিকায় (Awas Yojana) স্বজনপোষণের অভিযোগ ঘিরে রবিবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মানিকচকের (Manikchak) ভূতনি (Vutni) উত্তর চন্ডিপুর লুটিয়ারা গ্রাম। মূল অভিযোগ দক্ষিণ চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা আদুরী বিবির স্বামী আবির আলির বিরুদ্ধে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবির আলির স্ত্রী আদুরী বিবি কিষান জাতির টিকিটে নির্বাচন বৈতরণী পার হলেও পরে তৃণমূলে যোগ দেন।
আবাস যোজনার প্রথম পর্যায়ের তালিকায় ছিল আবির আলি সহ তার পরিবারের ১২ জনের। বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলে স্থানীয় কয়েকজন যুবক। ‘দুর্নীতি থেকে ভূতনিকে বাঁচাও’ নামক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের এই স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠে। লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় যুবক দানেশ আলি। পাকা দালান থাকা সত্ত্বেও কিভাবে আবাস তালিকায় নাম নথিভূক্ত হলো তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ, পাকা বাড়ি গোপন করে গোয়াল ঘরকে নিজেদের বাড়ি হিসেবে দেখানো হচ্ছে আবাস যোজনার তদন্তকারী আধিকারিকদের। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে প্রশাসন। গত সপ্তাহে আবাস যোজনার যে পূর্ণ তালিকা প্রকাশ হয় তাতে আবির আলির পরিবারের ছয় জন সদস্যের নাম বাদ পড়ে। অভিযোগ, এতেই অভিযোগকারী যুবক দানেশ আলির উপর ব্যাপক ক্ষেপে যায় আবির আলির পরিবার।
রবিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি রক্তদান শিবিরে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন অভিযোগকারী যুবক দানেশ আলি। অভিযোগ, তাঁকে একা পেয়ে হামলা চালায় আবির আলি ও তার পরিবারের লোকজন। এলোপাতারি চাকুর আঘাত করা হয় দানেশ আলিকে। এমনকি চাকু দিয়ে দানেশের গলার নলি কেটে দেওয়ার চেষ্টাও করে অভিযুক্তরা। দানেশ আলিকে বাঁচাতে তার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন ছুটে এলে তাদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপরই লুটিয়ারা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। দুই পরিবারের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই পরিবারের চারটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। চলে ব্যাপক ইট বৃষ্টি। সংঘর্ষে উভয় পরিবারের মোট কুড়িজন আহত হয়েছে। দানেশ আলি সহ মোট ১৫ জন মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতাল ও মালদা মেডিকেলে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। পরে ভুতনি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগকারী যুবক দানেশ আলির কাকিমা রুনা বিবি জানান, শুধুমাত্র আবাসের তালিকা নিয়ে অভিযোগ করায় এমন পরিস্থিতি। দানেশের অভিযোগের ভিত্তিতে নাম বাদ পড়েছে আবির আলির পরিবারের কয়েকজনের। তাই পরিকল্পনা করে দানেশকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছে। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন অভিযুক্ত আবির আলির স্ত্রী প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য আদুরী বিবি। আদুরী বিবি দাবি করেন, আবাস যোজনার অভিযোগ নিয়ে নয়, দুই পরিবারের মধ্যে বহুদিন থেকে ঝামেলা। তারই ফলস্বরূপ এই সংঘর্ষ। আদুরী বিবি অভিযোগ করে বলেন, ‘পরিকল্পনা মাফিক আমাদের পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে, দানেশের পরিবার। আমাদের চারটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এলোপাতাড়ি আমাদের মারধর করেছে। আমাদের বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিবারের অনেকে এখন হাসপাতালে ভর্তি।’
প্রাক্তন পঞ্চায়েতের সদস্য আদুরি বিবি নিজেদের তৃণমূল বলে দাবি করলে ও দক্ষিণ চন্ডিপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি দ্বিজেন মণ্ডলের দাবি, আবির আলি তৃণমূল সদস্য নয়। রাজনৈতিক কোনও সংঘর্ষ নয়, এটি দুই পরিবারের সংঘর্ষ বলে দাবি অঞ্চল সভাপতির। যদিও নির্যাতিত অভিযোগকারী দানেশ আলীর পাশে দাঁড়িয়েছেন মালদা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডল। বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘কে কোন রাজনৈতিক দল করে জানি না, তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় দানেশের উপর হামলা হয়েছে। আমরা দানেশ সহ অভিযোগকারী স্থানীয় যুবকদেরর পাশে আছি।’