জয়গাঁ, ৮ সেপ্টেম্বর : গণেশপুজোর মেলা বসেছে দলসিংপাড়া চা বাগানে। সেই দলসিংপাড়ায়, যে বাগান গত প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ। বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা সেই মেলায় একটু আনন্দ খুঁজতে আসছেন ঠিকই, তবে ছোটদের এটা ওটা কিনে দেওয়ার বায়না শুনে মুখের হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে বাবা-মায়েদের। সাত বছরের ছোট প্রেরণা গণেশপুজো দেখতে এসেছিল দলসিংপাড়া বাজার এলাকায়। পুজো দেখার থেকেও তার বেশি উৎসাহ মেলা নিয়ে। কারণ মেলায় রয়েছে নানা খেলনার দোকান ও জয় রাইড। একটি বেলুন পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু বায়না করার পরও কিনে দিতে পারেননি মা।
বাগান বন্ধ। সেখানকার শ্রমিকদের উপার্জনও প্রায় বন্ধ। কখন কোন কাজ মিলবে, কীভাবে উপার্জন হবে তার কোনও স্থিরতা নেই। কখনও এলাকায় দিনমজুরের কাজ করছেন তাঁরা। আবার কখনও ভুটানে কাজ করতে যাচ্ছেন। সব কাজই অস্থায়ী। আজ আছে, কাল নেই। বাগান বন্ধ থাকায় প্রতিদিনের সংসার চালানোটাই তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০ টাকা রোজগার করতেও সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তারন ওপর যত দিন যাচ্ছে তত দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। এসব কথাই বলছিলেন প্রেরণার মা ঝালোয়াড় খড়িয়া।
মেলায় ঘুরে দেখেছেন তিনি। বললেন, ‘১০ টাকার বেলুন এখন বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। যেখানে প্রতিদিন ১০০ টাকা রোজগার করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়, সেখানে ৩০ টাকা বেলুন কিনতে খরচ করে ফেললে চলবে কীভাবে?’ দলসিংপাড়া বাজারের হাটখোলা এলাকার তরুণরা মিলে এই গণেশপুজোর আয়োজন করেন। এবার পুজো উপলক্ষ্যে মেলায় বেশ কয়েকটি জয় রাইডও নিয়ে এসেছেন তাঁরা। উদ্যোক্তারা বলছেন, বাগান এলাকার শিশুদের আনন্দ দিতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।
মেলায় ঢুকলে অবশ্য একটু হোঁচট খেতে হবে। কারণ মেলা বলতেই যেমন জৌলুস বা একের পর এক দোকানপাটের ছবিটা ভেসে ওঠে, এখানকার ছবিটা ঠিক তেমনটা নয়। রয়েছে মিষ্টির দোকান আর বেলুনের দোকান। আর শিশুদের প্রধান আকর্ষণ জয় রাইড। সেখানেই দেখা গেল ভিড় জমেছে। সেই জয় রাইডে মেয়েকে চাপিয়েই বেলুনের আবদার ভুলিয়েছেন ঝালোয়াড়। বললেন, ‘কোনও খেলনা চায়নি আমার বাচ্চাটা। একটা বেলুন চেয়েছে, সেটাও আর ওকে দিতে পারলাম কোথায়? ওর বিষণ্ণ মুখটা দেখে ভুলিয়েভালিয়ে জয় রাইডে চড়ালাম। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ছোটদের জন্য এটা ফ্রি।’
বছর দশেকের অভিরাজ সুব্বাও মেলায় এসেছিল। বিনামূল্যে জয় রাইড চড়তে পেরে ভারী খুশি। বলল, ‘অন্য মেলায় এই রাইড চড়তে হলে টাকা দিতে হয়। কোনওটির জন্য ২০ আবার কোনওটির জন্য ৩০ টাকা। অন্য মেলায় গেলে শুধু ঘুরে চলে আসতাম। দেখতাম সবাই রাইড চড়ছে। এখানে টাকা লাগছে না, চড়তে পারছি। খুব আনন্দ হয়েছে।’ দলসিংপাড়া গণেশপুজো কমিটির তরফে রূপক জয়সওয়ালের কথায়, ‘বড় মেলার আয়োজন ইচ্ছে হলেই করতে পারতাম। কিন্তু সেটা হাস্যকর হত। আমাদের বাগান বন্ধ, শ্রমিকদের আর্থিক পরিস্থিতি ভেঙে গিয়েছে। মেলা মানেই তো হরেকরকমের দোকান, কেনাকাটি সব। এখানে সেটা হবে না। তাই শিশুদের মুখে উৎসবের দিনে হাসি ফোটাতে জয় রাইড এনেছি।’