স্বরূপ বিশ্বাস, কলকাতা: দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীদের বসিয়ে রাখা চলবে না, তাঁদের কাজ দিতে হবে। রাজ্য সরকারের সব দপ্তরের সতীর্থ মন্ত্রীকে এমনই হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee)। সরকারি কাজ নিয়ে আর কোনওরকম ঢিলেমি বা গয়ংগচ্ছ মনোভাব বরদাস্ত করতে রাজি নন তিনি। কাজের গতি বাড়াতেই হবে। এব্যাপারে কোনওরকম আপস করতে চান না তিনি। প্রায়শই অভিযোগ ওঠে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর একরকম কোনও কাজই নেই। নাম কে ওয়াস্তেই তাঁরা মন্ত্রী। তাঁদের কোনও কাজই আদৌ নেই। দপ্তরের কাজের কোনও দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হয় না। দপ্তরের কাজের ছড়িটা বলতে গলে পূর্ণমন্ত্রীরাই ঘুরিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রীদের এ হেন অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কানে এসে পৌঁছোতেই কড়া মনোভাব নিয়েছেন তিনি। তাতেই নড়েচড়ে বসেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রীরা। দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীদের কাজের দায়িত্ব দিতে তৎপর হয়েছেন তাঁরা।
নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাব জানার পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের কাজ ভাগ করে নিয়েছেন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। উত্তরবঙ্গের আট জেলার দায়িত্বে তিনি। তাঁর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মালদা জেলার বিধায়ক। দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে এখন তিনি শুধুই মালদা জেলার দায়িত্বে। ওই জেলায় সার্বিক উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও কাজ, নীতি প্রণয়ন থেকে সব কাজের দায়িত্বে তিনি। দপ্তরের হিসাবে অন্য ৭ জেলার কোনও কাজই নেই তাঁর হাতে। এতে অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে সাবিনা ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’-কে বলেন, ‘শুধু মালদা জেলাটাই আমি দেখছি। জেলায় যা কিছু সবটাই আমার দায়িত্বে। উত্তরবঙ্গের অন্য ৭ জেলায় দায়িত্বে রয়েছেন দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রী।’
উত্তরবঙ্গের আট জেলার মধ্যে মাত্র একটি জেলার দায়িত্বে থেকেই তিনি সন্তুষ্ট কি না জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘না না কোনও অসুবিধা নেই তাতে। পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করেই সব কাজ হচ্ছে। যোগাযোগও আছে। আলোচনা করেই কাজ হচ্ছে।’
বিষয়টি এদিন এড়িয়েও যাননি দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রী উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই আমরা দপ্তরের কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছি। দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন শুধু মালদা জেলার দায়িত্বে আছেন। ওই জেলার যা কিছু উন্নয়ন ও পরিকল্পনার কাজ তিনিই দেখছেন। জেলার সবটা উনি দেখছেন। ও ব্যাপারে নাক গলাই না আমি। এছাড়া দপ্তরের সব কাজ নিয়েই আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রতিমন্ত্রীও থাকেন। সমন্বয়ের কোনও অভাব নেই। অসুবিধা কিছু হচ্ছে না।’
একমাত্র উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর ছাড়াও সরকারের একাধিক দপ্তরের একাধিক প্রতিমন্ত্রী আছেন। সেই সব প্রতিমন্ত্রীর আলাদা করে কী কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সরকারিভাবে অধিকাংশের ক্ষেত্রে তা জানা যায়নি। নবান্নে একাধিক পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। মুখে তাঁরা কুলুপ এঁটে রয়েছেন। প্রবীণ এক মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘আমাদের কাজ ভাগের কথা প্রকাশ্যে আপনাদের বলব কেন? সব কিছুরই তো একটা ‘ডেকোরাম’ আছে। দপ্তরের কাজ তো আমরা করছি সবাই মিলেই। পূর্ণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এসব ভাগাভাগি কেন?’