নয়াদিল্লিঃ জেডিইউ সুপ্রিমো ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের আহ্বানে আগামী ২৩ জুন পটনায় অনুষ্ঠিত হতে চলা সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী দলীয় বৈঠকে একই মঞ্চে পাশাপাশি দেখা যেতে পারে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধিকে। বুধবার রাতে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল টুইট করে রাহুলের উপস্থিতি চূড়ান্ত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানান, ‘আগামী ২৩ জুন পটনায় বিরোধী দলীয় বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এবং দলের বর্ষীয়ান নেতা রাহুল গান্ধি উভয়েই অংশগ্রহণ করবেন।’ বিজেপির নাম না নিয়ে তিনি এও বলেন, ‘গণতন্ত্র বাঁচাতে ও দেশে বিভাজনকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে বিরোধী দলীয় ঐক্য এক নতুন দিকনির্দেশ করবে বলে আমরা আশাবাদী।’ বেণুগোপালের এই বার্তায় পরিস্কার হয়ে যায়, ২৩ জুন পটনার মঞ্চে পাশাপাশি দেখা যেতে পারে দুই হেভিওয়েট বিরোধী নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধিকে, যা সাম্প্রতিক কালে বিরোধী ঐক্যের প্রতি এক সদর্থক বার্তা প্রেরণে সক্ষম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ৷
প্রসঙ্গত, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণ এবং বিরোধী ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে আগামী ১২ জুন পটনায় সমমনস্ক বিরোধী দলগুলির মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তৃণমূল সুপ্রিমো এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরেই জানা যায়, ওই দিনে বৈঠক হচ্ছে না। কংগ্রেস ও তামিলনাড়ুতে তাদের জোটসঙ্গী ডিএমকে-র অনুরোধেই এই বৈঠকের তারিখ পিছোতে হয়। ১২ জুনের বদলে আগামী ২৩ জুন হবে এই বৈঠক। প্রশ্ন উঠেছিল, বৈঠকের তারিখ পিছিয়ে দিলেও রাহুল গান্ধি আদৌ তাতে অংশ নিতে পারবেন কি-না! প্রথমে ১২ জুন বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, ওই সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি থাকতে পারবেন না বলে জানা যায় কংগ্রেস সূত্রে। বর্তমানে মার্কিন সফরে রয়েছেন রাহুল গান্ধি। তাঁর দেশে ফেরার কথা ১৫ জুন। তাঁর মা, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধিও শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন, সঙ্গে রয়েছেন মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। গান্ধি পরিবারের কোনও সদস্যই দেশে উপস্থিত না থাকায়, বৈঠক কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সেই মতো ২৩ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়েও যায় বৈঠক। তার পরেও সন্দেহ ছিল রাহুল গান্ধির তাতে অংশ নিতে পারা নিয়ে। অবশেষে বুধবার রাতে দলের বর্ষীয়ান নেতা কে সি বেণুগোপাল রাহুলের সম্ভাব্য উপস্থিতি চূড়ান্ত করলেন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও একপ্রকার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কংগ্রেসের তরফে অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ৷ নীতীশ জি বর্ষীয়ান নেতা, তিনি সমস্ত বিরোধী শিবিরকে একজোট করার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছেন এটা তারই প্রতিফলন৷ ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ আরও অনেক বেশি করে হবে এবং সফলতা পাবে এই আশাই রাখি৷’ সুদীপ এও জানান, ‘বিরোধী ঐক্যই শেষ কথা৷ আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই সেকথা বলেছেন৷ তাঁরই নির্দেশিত পথে পটনার এই ঐতিহাসিক সমাবেশ৷ আমাদের দলনেত্রী সেখানে উপস্থিত থাকবেন৷ ভবিষ্যতের বিরোধী ঐক্যের দিশানির্দেশের লক্ষ্যে আমরা এই বৈঠকের সাফল্য কামনা করছি৷’ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা মুখ্য সচেতক সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘এই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ কোন দল কাকে পাঠাবে সেটা পুরোপুরি তাদের বিবেচ্য বিষয়৷ আমাদের দলের সুপ্রিমো সেখানে উপস্থিত থাকবেন এটাই আমাদের কাছে বড় বিষয়৷’ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাহুলজির উপস্থিতি বিরোধী বৈঠককে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলল। সকলের মিলিত উদ্যোগে বৈঠক সাফল্য পাক এই কামনা করি।’