নাগরাকাটাঃ স্কুলের অফিস ঘরের ভেতর থেকে কিলবিল করে বেরিয়ে আসছে বিষধর গোখরো সাপের বাচ্চা। এরপরই সটান এগিয়ে যাচ্ছে পাশের শ্রেণীকক্ষ বা লাগোয়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দিকে। যে ছোট ছিদ্র দিয়ে সর্পকূলের ওই নিষ্ক্রমণ সেখানে আবার উঁকি দিতে দেখা যাচ্ছে আরও একাধিক গোখরোকে। সব মিলিয়ে সর্প কান্ডে বুধবার হলুস্থুল পড়ে গেল নাগরাকাটা স্টেট প্ল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এদিন মোট ৫ টি গোখরোর বাচ্চা বের হয়। তার মধ্যে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ২ টিকে। বাকীগুলি কোথায় গেল তার কোনও হদিশ নেই।
এদিন, পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনওরকমে মিড ডে মিল খাইয়ে আগে ভাগেই ছুটি দিয়ে দিতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। টিআইসি রেশম আনসারি বলেন, ভয়ঙ্কর ঘটনা। স্কুলের মধ্যেই যে ছানা পোনা সহ গোখরো সাপ ডেরা বেঁধে আছে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। কয়েকটি বাচ্চা বের হওয়ার পর বিষয়টি বোধগম্য হয়। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নাগরাকাটার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বিজয় চন্দ্র রায় বলেন, “সাপ উদ্ধার করতে পারেন এমন কাউকে নিয়ে এসে সমস্ত গোখরোকে যাতে উদ্ধার করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কুলকে এমন কথা জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে বন দপ্তরের সাহায্য নিতে হবে।”
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার সকালে। সেদিন রিক্তা সরকার নামে এক শিক্ষিকা হঠাৎ খেয়াল করেন তাঁর পায়ের সামনে দিয়ে একটি সাপের বাচ্চা শ্রেণী কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় নাগরাকাটার এক সর্পপ্রেমীকে। তিনি এসে দেখেন অফিস রুমের মেঝের ছিদ্র দিয়ে আরও একটি সাপের বাচ্চা বেরিয়ে আসছে। সেটি সহ কিছুক্ষণ আগে বের হওয়া সাপটিকেও উদ্ধার করে তিনি জঙ্গলে ছেড়ে দেন। বুধবার ফের কয়েকটি সাপ একইভাবে বের হয়ে আসতে শুরু করে। আবার খবর দেওয়া হয় সর্পপ্রেমী বাবুনকে। এদিনও তিনি ঘটনাস্থলে এসে ২ টি গোখরোর বাচ্চাকে উদ্ধার করেন। ঘন্টা দুয়েক থাকার পর ওই সর্পপ্রেমী চলে যেতেই আবারও ৩টি সাপ বের হয়। সব মিলিয়ে ভয়ে এদিন ঠিকমত আর পঠনপাঠন হতে পারেনি স্কুলে। দুপুর দেড়টা নাগাদ স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এক সহ শিক্ষিকা দীপাঙ্কণা ভট্টাচার্য বলেন, গোখরোর বাচ্চাগুলি শ্রেণীকক্ষের ভেতর ঢুকে বসে থাকলে কি যে হবে তা ভেবেই আঁতকে উঠছি।
সর্পপ্রেমী ওই যুবক জানাচ্ছেন, গোখরো সাপ একসঙ্গে ৩৫-৪০ টি ডিম দেয়। তার মধ্যে ২৫-৩০ টির ক্ষেত্রে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এসময় মা গোখরো সেখানেই বেশ কিছু দিন থাকে। তাই আসল গোখরোটি মেঝের নীচে রয়েছে বলে তাঁর অনুমান। এক্ষেত্রে মেঝে খুঁড়ে মা গোখরো সহ অন্য বাচ্চাগুলিকে উদ্ধার করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প হাতে নেই।
নাগরাকাটা শহরে অবস্থিত ওই প্রাথমিক স্কুলটি এলাকার অন্যতম পুরোনো। সেখানে দুশোর কাছাকাছি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এদিন স্কুলের মধ্যে সাপ দেখে পড়ুয়াদের অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। আতঙ্ক ছড়ায় অভিভাবক মহলেও। পাশের ৮৮ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মৌসুমী ভট্টাচার্য বলেন, স্কুলের অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে গোখরোগুলির আমাদের কেন্দ্রের দিকেও আসছে। এখানেও বেশ কিছু শিশু মেঝেতে বসে থাকে। দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করুক।