কোচবিহার: অগাস্টের শুরু থেকেই কলেজগুলিতে প্রথম সিমেস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। এদিকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কলেজগুলি কমবেশি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বেশ কিছু কলেজে নির্দিষ্ট কিছু বিভাগে স্থায়ী অধ্যাপক (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর) নেই। কোথাও ল্যাবের যন্ত্রপাতির সমস্যা, কোথাও ছাত্র অনুপাতে লাইব্রেরির আয়তন এবং ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়ানো দরকার বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষরা। এই পরিস্থিতিতে কলেজগুলিতে ছাত্র সংখ্যা বাড়লে আগামীতে কী হবে, সেকথা ভেবে চিন্তায় কর্তৃপক্ষ।
হলদিবাড়ির নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়ে তো দীর্ঘদিন ধরেই মাইনর কোর্সে অঙ্কের ক্লাস চলছে আমন্ত্রিত শিক্ষক দিয়ে। মেখলিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ে সংস্কৃত, সমাজবিদ্যা, দর্শন, শারীরশিক্ষা, এমনকি ভূগোলের মতো প্র্যাকটিকাল কোর্সেও সাবস্ট্যানটিভ শিক্ষক নেই। ক্লাস চালানো হচ্ছে স্টেট এইডেড কলেজ টিচারদের দিয়ে। এই পরিস্থিতি নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়, ঘোকসাডাঙ্গা বীরেন্দ্র মহাবিদ্যালয়, বাণেশ্বর সারথীবালা মহাবিদ্যালয়, মাথাভাঙ্গা কলেজ, বক্সিরহাট মহাবিদ্যালয় সহ একাধিক কলেজে। জেলার প্রায় প্রতিটি কলেজেই শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে মূলত পড়ুয়াদের।
জেলার কলেজগুলির মধ্যে অন্যতম ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা মহাবিদ্যালয়। এই কলেজের কিছু বিভাগে এক থেকে দুজন অধ্যাপক দিয়েই ক্লাস করানো হচ্ছে। নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ৮ জন এবং স্টেট এইডেড কলেজ টিচার ১৫ জন রয়েছেন। এই কলেজে ৯ জন আমন্ত্রিত শিক্ষক রয়েছেন। তবে শুধু এই একটি কলেজে নয়। জেলার অধিকাংশ কলেজেই একই পরিস্থিতি। অন্য কলেজগুলিতে সেভাবে আমন্ত্রিত শিক্ষক না থাকলেও কমবেশি প্রতিটি কলেজেই অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচারের প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যায় রয়েছেন স্টেট এইডেড কলেজ শিক্ষকরা। তাঁরা না থাকলে কলেজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ত বলে জানিয়েছেন মেখলিগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ মিঠু দেব। তাঁর কথায়, ‘সব কলেজেই শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। স্টেট এইডেড কলেজ শিক্ষকদের দিয়ে ঘাটতি কিছুটা মেটানো গেলেও কলেজগুলিতে ঘাটতি রয়েই গিয়েছে। আমার কলেজে বহু বিষয়ে এখনও সাবস্ট্যানটিভ শিক্ষক নেই। পড়ুয়াদের সুবিধার্থে প্রতিটি কলেজেই সাবস্ট্যানটিভ টিচার বাড়ানো দরকার।’
বর্তমানে মেখলিগঞ্জ কলেজে ১২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার এবং ২২ জন স্টেট এইডেড কলেজ টিচার রয়েছেন। কলেজটিতে পরিকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষাকর্মীর অভাব। এদিকে ঘোকসাডাঙ্গা বীরেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে ৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ১১ জন স্টেট এইডেড কলেজ টিচার রয়েছেন। গ্রামীণ এই কলেজটিতেও পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। একই পরিস্থিতি বাণেশ্বর সারথীবালা মহাবিদ্যালয়েও। সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ৬ জন এবং স্টেট এইডেড কলেজ টিচার রয়েছেন ১৭ জন। কলেজে ভূগোল এবং ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগ থাকলেও সেখানে কোনও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নেই। ল্যাবেও যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। কলেজ সূত্রে খবর, কলেজে শিক্ষাকর্মীর খামতি রয়েছে। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর জন্য পোস্ট স্যাংশন থাকলেও এতদিনেও পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, মাথাভাঙ্গা কলেজেও এডুকেশন এবং সোশিওলজি বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নেই। বক্সিরহাট মহাবিদ্যালয়েও ৯ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ১৬ জন স্টেট এইডেড কলেজ টিচার রয়েছেন। কলেজে লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের অভাবের পাশাপাশি স্মার্ট ক্লাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি ল্যাবে যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। কলেজের টিআইসি কার্তিক সাহা বলেন, ‘কলেজে শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত নানা সমস্যাও রয়েছে।’