আসানসোল ও রানিগঞ্জঃ মোবাইল চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হল ১৬ বছরের এক কিশোর। এই কিশোর একটি বেসরকারি কোম্পানির গোডাউনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করত। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে অন্ডাল থানার বাবুইশোল কলোনিতে। এই ঘটনায় গোডাউনের ম্যানেজার রবীন্দ্র সিংয়ের বিরুদ্ধে রানিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, আত্মঘাতী কিশোরের নাম অভিরূপ প্রসাদ। বাড়ি অন্ডাল থানার বাবুইশোল কলোনিতে। অভিরূপ গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে রানিগঞ্জ থানার বাঁশরায় একটি বেসরকারি কোম্পানির গোডাউনে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করত। গত ২৬ নভেম্বরে রাতে ঐ গোডাউনে কাজ করা দুই রাজমিস্ত্রীর দুটি মোবাইল ফোন চুরি যায়। অভিযোগ, সেই চুরির দায় অভিরূপ প্রসাদের উপর চাপিয়ে দেন ঐ গোডাউনের ম্যানেজার রবীন্দ্র সিং। পরের দিন ২৭ নভেম্বর অভিরূপ বাড়ি চলে যায়। পরে ঐ ম্যানেজার অভিরূপের মাকেও ফোন করে মোবাইল চুরির ঘটনার কথা বলে। স্বাভাবিক ভাবেই এই চুরির অপবাদে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে ঐ কিশোর। শুক্রবার সকালে বাড়ির লোকেরা কিশোরকে ঘরের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে করানো হয় ঐ কিশোরের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত। এরপর পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিয়ে সোজা পৌঁছে যান রানিগঞ্জ থানার বাঁশরায় ঐ বেসরকারি কোম্পানির গোডাউনে। তারা সেখানে মৃতদেহ রেখে গোটা ঘটনার তদন্ত চেয়ে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান রানিগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার জ্যোতি সিং, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় সহ এলাকার তৃনমুল কংগ্রেসের নেতারা। তারাও গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
এই প্রসঙ্গে মৃত কিশোরের কাকা রঞ্জন প্রসাদ বলেন, ‘আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে রানিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এই ঘটনার জন্য দায়ী গোডাউন ম্যানেজার। আমরা চাই পুলিশ তদন্ত করে সত্যটা বার করুক। পাশাপাশি আমরা ক্ষতিপূরণের দাবি করেছি।’
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলার জ্যোতি সিং বলেন, ‘ঐ কোম্পানি প্রথমে মানতেই চায়নি যে ঐ কিশোর এখানে কাজ করত। কিন্তু মাসের বেতন দেওয়ার সময় যে ডায়েরিতে, তা লেখা হত, তা দেখাতেই তারা মেনে নেয়। এরপর যে চুরির কথা বলা হচ্ছে, তার কোনও প্রমাণ আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবাক লাগছে, একটা ১৬ বছরের কিশোর আড়াই বছর ধরে ওখানে কাজ করছে। এই বিষয়টা আমরা পরে দেখব। আগে ঐ কিশোরের পরিবারের ব্যাপারটা আমরা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’