রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের ২ নম্বর জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পুকুর খনন না করেই বিল তুলে নিয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সহ পঞ্চায়েতের কর্তারা। এমন অভিযোগে প্রায় ১০ মাস ধরে গ্রামবাসীরা সোচ্চার হয়েছেন। নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে গ্রামবাসীরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। শনিবার আদালতের নির্দেশে রায়গঞ্জ ব্লক অফিসের এনআরইজিএস প্রকল্পের আধিকারিক ও নির্মাণ সহায়করা দুটি গাড়ি নিয়ে তদন্তে গেলে গ্রামবাসীরা তাঁদের ঘিরে ধরলে গাড়ি রেখেই তাঁরা ঘটনাস্থল ছাড়েন। পরে ভাটোল ফাঁড়ির পুলিশ এসে গাড়িগুলি ঘেরাও মুক্ত করে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ২১টি পুকুর খনন না করেই বিল তুলে নিয়েছেন বিদায়ী প্রধান জ্যোৎস্না বর্মন সহ পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা। অথচ তদন্তকারীরা সেই অভিযোগের তদন্ত না করে ৫০ বছরের পুরোনো পুকুরের মাপজোখ করছিলেন। তা দেখেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ে।
গ্রামবাসী মাহাতাব আলি নামে জানান, আমরা জেলা পুলিশ প্রশাসনের কাছে পুকুর খননের অভিযোগ জানিয়েও আসল বিচার না পেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। হাইকোর্টের নির্দেশ মতো পুকুরের তদন্ত করতে এসে অফিসাররা পুরোনো পুকুরের মাপজোখ করেন। গ্রামবাসীরা তা মেনে নিতে পারেননি। তাই তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। এর আগে গত অক্টোবর মাসের ২০ তারিখেও আধিকারিকেরা এসে একই কাজ করেছিলেন।
গ্রামবাসীদের দাবি, ২১টি পুকুরের মধ্যে ৩টি পুকুরের খোঁজ মিলেছে। ১৮টি পুকুর খনন না করেই বিল তুলে নিয়েছেন অভিযুক্তরা। এর আগেও চুপচাপ তদন্ত করতে এসে অফিসাররা পালিয়ে যান। অভিযোগ, যাদের নামে পুকুর দেখিয়ে বিল তোলা হয়েছে তাঁদের কোনও জায়গা জমি নেই। ভুতুড়ে বিল বানিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে।
গ্রামবাসী আসকর আলি বলেন, পুকুর না খুঁড়েই বিল তুলে নেওয়ায় গ্রামবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছেন। আজ সঠিক তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভও দেখান গ্রামবাসীরা। তাঁর দাবি, এর আগে আধিকারিকেরা সরিয়াবাদ এলাকায় ৬টি পুকুরের মধ্যে ১টি পুকুরের সন্ধান পান। সঠিক তদন্তের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও আন্দোলনে থামবে না বলে জানান আসকর আলি।
এদিন অভিযোগকারীদের না নিয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও নির্মাণ সহায়ক ব্লকের অফিসারদের পুকুর খননের জায়গাগুলিতে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অভিযুক্ত। তাই তাঁকে নিয়ে তদন্ত কেন করা হবে জানতে চান।
গ্রামবাসী আসকর আলি জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এতদিন বেআইনি পুকুর খননের তদন্ত বন্ধ ছিল। গত ১৩ আগস্ট জেলা প্রশাসনের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তদন্তের কাজ শেষ করার জন্য আবেদন করি। কিন্তু আজ ব্লকের আধিকারিকেরা আমাদের না জানিয়েই তদন্ত করতে চলে আসেন। যে জায়গাগুলি নিয়ে আমাদের অভিযোগ সেখানে তদন্ত না করে পুরোনো পুকুর, খাল, বিল তাঁরা তদন্ত করেন। এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। আধিকারিকেরা গাড়ি রেখে চলে যান।
উল্লেখ্য, মন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মনের স্ত্রী জ্যোৎস্না বর্মন জগদীশপুর অঞ্চলের প্রধান থাকাকালীন সময়ে পুকুর খনন না করেই বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো বিদায়ী প্রধান জ্যোৎস্না বর্মন ৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৪১ টাকা এবং আসকর আলি ১১ হাজার ৪৬০ টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু প্রশাসনের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে গ্রামবাসীরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন।
এদিন মন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মনের অনুগামী রায়গঞ্জ ব্লক-২ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দীপঙ্কর বর্মনের দাবি, আজ কি হয়েছে জানা নেই, শুনতে হবে। এদিন গ্রামবাসীরা গাড়িগুলি ঘিরে রাখায় তদন্তকারী আধিকারিকেরা জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে চলে আসেন।
তদন্তকারী আধিকারিক রেজাউল করিম বলেন, আজ আমরা আদালতের নির্দেশ মেনে সরিয়াবাদে পুকুর দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা যেখান থেকে তদন্ত শুরু করেছিলাম সেখান থেকে ইউ টার্ন নিয়ে অন্য জায়গায় চলে এসেছি। সেখান থেকে রোড কাছে হওয়ায় রোডে উঠেছি। গাড়িগুলি আটকে রেখেছে।
তিনি বলেন, গ্রামবাসীদের কী অভিযোগ আছে জানি না। জিও ট্যাগ যেভাবে করা আছে সেভাবে মিলিয়ে দেখছি। এখন দেখতে হবে মাপজোখ কী আছে। কেন গাড়িগুলি আটকে রাখা হয়েছে জানি না।
রায়গঞ্জের বিডিও শুভজিৎ মণ্ডল বলেন, আদালতের নির্দেশ ছিল পুনরায় তদন্ত করার জন্য। সেই মতো জেলাশাসক আমাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে ব্লক থেকে তদন্তের জন্য টিম গিয়েছিল। শুনেছি, এদিন গ্রামবাসীরা বাধা দেয়।