ধূপগুড়ি: প্রশাসনের কর্তাদের মৌখিক নির্দেশে আলুর বন্ড বিলি নিয়ে জটিলতা বাড়ছে ধূপগুড়িতে। হিমঘরে আলু রাখার জন্য কৃষকদের দেওয়া ১৮ টাকা অগ্রিম নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীবিরোধে ধুয়ো দিয়েছে প্রশাসনের এই নির্দেশ। সব মিলিয়ে আলু হিমঘরে পাঠানোর পর্ব শুরুর মুখে সরগরম উত্তরের আলু হাব ধূপগুড়ির রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক আবহাওয়া।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে হিমঘরগুলিতে ৩০ শতাংশ বন্ড সংরক্ষিত রয়েছে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক আলুচাষিদের জন্য। সেই হিসেবে এবার জেলায় ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৯২ প্যাকেট আলুর বন্ড চাষিদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। হিমঘরে আলু লোডিং নিয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা শাসকের পৌরোহিত্যে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত জেলার ২৭টি হিমঘরে চাষিদের জন্য সংরক্ষিত ৭০ প্যাকেট করে আলু সংরক্ষণের বন্ড বিলি করা হবে। হিমঘরগুলি প্যাকেট প্রতি মোট ১০৫ টাকা ভাড়ার ১৭ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ টাকা অগ্রিম হিসেবে নিয়ে বন্ড বিলি শুরু করা হয়। হিমঘর মালিকদের দাবি, জেলা স্তরের বৈঠকে এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের জারি নির্দেশিকায় তেমন কোনও কথার উল্লেখ ছিল না। বন্ড বিলি প্রক্রিয়ার মাঝেই এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
গত ৩ মার্চ শাসকদল তৃণমূলের এক প্রতিনিধিদল ধূপগুড়ির মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত দাবি জানায়, অবিলম্বে প্যাকেট প্রতি ১৮ টাকা অগ্রিম নেওয়া বন্ধ করতে হবে। শুরু হয় চাপানউতোর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ইস্যুতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত হিমঘর মালিকদের উপস্থিতিতে সভা হয় ধূপগুড়ি এসডিও অফিসে। তবে মাঝপথে অগ্রিম নেওয়া বন্ধে রাজি হননি হিমঘর মালিকরা।
শেষপর্যন্ত প্রায় সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভেস্তে যায় সেই সভা। এরপর শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধূপগুড়ি ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তার দপ্তরে হিমঘর মালিক, জনপ্রতিনিধি এবং তৃণমূল নেতাদের একাংশ এবং আধিকারিকদের সভা হয়। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুসারে ঘুরপথে হলেও আপাতত চলতি মরশুমের জন্যে প্যাকেট প্রতি ১৮ টাকা অগ্রিম দিয়েই বন্ড নিতে হবে সবাইকে। সমস্যা সমাধানে এদিনের সভায় উপস্থিত ধূপগুড়ির বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে হিমঘরে আলু ওঠানামার কাজে যুক্ত শ্রমিকদের মজুরি সেখানেই মিটিয়ে দেওয়ার কথা। অগ্রিম হিসেবে না ধরা হলেও সেই বাবদ অন্তত এবারের জন্য ১৮ টাকা নেওয়ার কথা বলে হিমঘর কর্তৃপক্ষ। সরকারি বিধি অনুসারেই যাতে পুরো কাজ হয় সেটা নিশ্চিত করার কথাই এদিনের সভায় আলোচনা হয়েছে।’
ধূপগুড়ির ক্ষেত্রে আলুর বন্ড মহার্ঘ হওয়ায় এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের আগ্রহ বরাবরই খুব বেশি। চাহিদামতো অনুগামীদের বন্ড তুলে দিতে পারা এখানে ক্ষমতার প্রকাশ হিসেবেই ধরা হয়। বন্ড নিয়ে শাসক নেতাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই থেকেই ১৮ টাকা নিয়ে জটিলতার শুরু। তবে ধূপগুড়িতে আলুর বন্ড নিয়ে দলের অন্দরের এই ঠান্ডা লড়াইকে মোটেই ভালোভাবে দেখা হচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন রাজ্য তৃণমূল নেতারা।
এদিকে, তিরিশ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হলেও ব্লক প্রশাসনের তরফে অনেক হিমঘরে যে সংরক্ষণ তালিকা পাঠানো হয়েছে তা পেরিয়েছে ষাট শতাংশের বেশি। এনিয়ে ক্ষোভ থাকলেও প্রশাসন এবং শাসক নেতাদের চাপে তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান হিমঘর কর্তাদের একাংশ। যদিও পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর সমিতির উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক মনোজ সাহা বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে যে নির্দেশিকা আমাদের দেওয়া হবে সেই মোতাবেক লোডিং চলবে। এর বাইরে নিজের থেকে কোনও হিমঘর কর্তৃপক্ষ যাতে কোনও পদক্ষেপ না করে সেবিষয়ে সাংগঠনিকভাবে আমরা জানিয়েছি। আশা করছি নির্বিঘ্নেই লোডিং শুরু হবে।’