ফালাকাটা: চলতি বছরে ফালাকাটা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বংশীধরপুর, কালীপুর, শিশাগোড়, রাইচেঙ্গা ও আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পারপাতলাখাওয়া গ্রামে বারবার হাতি ঢুকে পড়ছে। বংশীধরপুরের একটি পাকা রাস্তাই হয়ে উঠছে হাতির নয়া করিডর। ওই রাস্তা পারাপার করলেই হাতির দল বাকি গ্রামে অনায়াসেই চলে আসছে। এই নয়া করিডর নিয়ে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী ও বন দপ্তর। তাই রবিবার এ বিষয়ে গ্রামবাসীদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা করে জলদাপাড়া বন দপ্তর। তবে হাতির হানায় সামান্য ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি নন স্থানীয়রা। রবিবারের সভায় তাই সকলেই নিরাপত্তা বজায় রাখার দাবি তোলেন।
রবিবার বিকেলে পারপাতলাখাওয়া প্রাইমারি স্কুল চত্বরে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে জলদাপাড়া সাউথ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রাজীব চক্রবর্তী, শালকুমারহাটের বিট অফিসার সুজিত সরকার, পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কমলেশ্বর বর্মন সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এলাকায় হাতি ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীদের কী কী করতে হবে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখা করেন বনকর্তারা। বন্যপ্রাণ আইন সম্পর্কেও গ্রামবাসীদের বোঝানো হয়। তবে গ্রামবাসীর দাবি নিরাপত্তাই।
শিশাগোড় গ্রামের রমানাথ রায়ের কথায়, ‘এক বছর আগেও আমাদের এলাকায় এত ঘনঘন হাতি ঢুকত না। কিন্তু এবার যেন রেকর্ড সংখ্যক হাতি ঢুকে পড়ছে। কখনও জমির ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, কখনও আবার ঘরবাড়ি ভাঙছে। আর বন দপ্তর ক্ষতিপূরণ দেয় সামান্যই। তাই আমরা ক্ষতিপূরণের বদলে নিরাপত্তা চাই।’
প্রবীণ ভানু চন্দর বয়স ৭০। এতবছর এই এলাকায় থাকতেন তিনি। হাতির হানা আগে এতটা হত না বলেই দাবি তাঁর। বন দপ্তরের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি। রবিবারের সভায় গ্রামবাসী সুজিত সরকার লোকালয়ে বারবার হাতি ঢোকার কারণ জানতে চান।
এদিন উপস্থিত না থাকলেও ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ দীপক সরকার বলেন, ‘ওই এলাকায় হাতির নয়া করিডর দুশ্চিন্তার কারণ। বন দপ্তর সবই জানে। বারবার ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চাষিরাও বিপাকে পড়েছেন। সব দিক সমন্বয়ের জন্যই এমন আলোচনা সভা প্রয়োজন। ভালো উদ্যোগ।’
তবে ক্ষতিপূরণ যে পর্যাপ্ত হয় না তা বনকর্তারাও মেনে নেন। বিট অফিসার সুজিত সরকার গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘হাতির হানায় যে ক্ষতি হয় আর তার পরিবর্তে আপনাদের যা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তা হয়তো একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। তবে সকলেই সতর্ক থাকুন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। আপনাদের পাশাপাশি বন্যপ্রাণের নিরাপত্তার জন্যও আমরা কাজ করি।’
রেঞ্জ অফিসার রাজীব চক্রবর্তীর কথায়, ‘হাতি ঢোকার খবর পেলেই বনকর্মীরা এইসব এলাকায় চলে আসেন। গ্রামবাসী যাতে আমাদের সহযোগিতা করেন সেজন্যই এরকম আলোচনা সভা। তবেই আমরা সঠিকভাবে নিরাপত্তা দিতে পারব।’ সভা শেষে গ্রামবাসীদের লিফলেটও বিলি করা হয়।