নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় আশানুরূপ ফল করতে না পারায় বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না কংগ্রেস (Congress) হাইকমান্ড। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ করছে দল। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব- রাহুল গান্ধি, প্রিয়াংকা গান্ধি ও মল্লিকার্জুন খাড়গে বাংলায় টানা প্রচার চালাবেন। প্রায় পাঁচ দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক খরা কাটাতে তাঁরা রাজ্যজুড়ে জনসংযোগ করবেন।
প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হবে কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি মালদা (Malda)। মালদা দক্ষিণের সাংসদ ইশা খান চৌধুরী জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে রাহুল গান্ধি, প্রিয়াংকা গান্ধি সহ শীর্ষনেতারা বিধানসভা ভোটের প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। তাঁর বক্তব্য, ‘মালদা দিয়ে শুরু হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য রাজ্যে কংগ্রেসের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করা। বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে দল।’
গত লোকসভা ভোটের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস হাইকমান্ডের প্রচার কার্যত ছিল না বললেই চলে। তবে বিধানসভা ভোটে সেই অবস্থান বদলাচ্ছে শতাব্দীপ্রাচীন দল। এবার প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর দুর্গ বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদেও জোরকদমে প্রচারে নামতে চলেছে কংগ্রেস। সূত্রের খবর, রাহুল ও প্রিয়াংকা সেখানে বড় জনসভা করবেন।
কংগ্রেসের এহেন পদক্ষেপের পর প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ইন্ডিয়া (INDIA) জোটে ফাটল ধরল? এই বিষয়ে এক কংগ্রেস সাংসদ বলেছেন, ‘জোট হয়েছিল লোকসভা ভোটের জন্য। বিধানসভা ভোটে সেই বাধ্যবাধকতা নেই।’ অর্থাৎ এবার বাংলার মাটিতে শুধু বিজেপির সঙ্গে নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধেও সরাসরি লড়াইয়ে নামছে কংগ্রেস।
দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধি ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র সম্পর্কে বিশদ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। দিল্লিতে বসেই তাঁরা নির্বাচনি ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে ফেলতে চাইছেন। পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে প্রচারের জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবি জানানো হয়েছে। কারণ এককভাবে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে গেলে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা দলের রাজ্য শাখার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
কংগ্রেসের কৌশল, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তারা এবার আর দ্বিতীয় সারির প্রতিপক্ষ হতে রাজি নয়। হারানো জমি ফিরে পেতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে দল। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে সমানভাবে আক্রমণ শানিয়ে তারা নিজেদের জনভিত্তি শক্তিশালী করতে চাইছে। বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের এই আগ্রাসী মনোভাব যে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে, তা বলাই বাহুল্য।