সায়নদীপ ভট্টাচার্য, বক্সিরহাট: কোচবিহারের (Cooch Behar) বক্সিরহাটে (Bakshirhat) অসম-বাংলা সীমানা লাগোয়া নাজিরান দেউতিখাতা এমভিআই চেকপোস্টের প্রায় ছয় লক্ষ টাকার কোনও হদিস মিলছে না। এই ঘটনায় চেকপোস্টে স্পেশাল ফি ও জরিমানা আদায়কে কেন্দ্র করে বড়সড়ো দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রতিদিনের কালেকশনের টাকা ব্যাংকে জমা না পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে। এই টাকা অন্য কোথাও খাটানো হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তুফানগঞ্জের মহকুমা শাসকের ওপর এই চেকপোস্টের ক্যাশ সেকশনের দায়িত্ব রয়েছে। মহকুমা শাসক বাপ্পা গোস্বামী বলেন, ‘ক্যাশ সেকশনে থাকা ৬ লক্ষ ৭০০ টাকার কোনও হিসেব মিলছে না। সবকিছু জানিয়ে বক্সিরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।’ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তুফানগঞ্জের এসডিপিও বৈভব বাঙ্গার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ক্যাশিয়ারকে আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
পিপি মডেলের এই এমভিআই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য লরি অসম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে চলাচল করে। শুধুমাত্র ভিনরাজ্যের ট্রাকগুলিকে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তা ব্যবহারের জন্য রাজ্য সরকারকে আলাদা করে ব্যালেন্স স্পেশাল ফি বাবদ রোড ট্যাক্স জমা দিতে হয়।
এছাড়াও ওভারলোড করা হলেও সেই জরিমানার টাকাও এই চেকপোস্টে জমা পড়ে। প্রতিদিন গড়ে ছয়–আট লক্ষ টাকা এখানে জমা পড়ে। স্পেশাল ফি ও ওভারলোডিংয়ের জরিমানা বাবদ ২২ জুলাই এই চেকপোস্টে ৬ লক্ষ ৭০০ টাকা আদায় হয়েছিল। সেদিন দায়িত্বে থাকা ক্যাশিয়ার মহেশ মহন্ত ওই টাকা লকারে রাখার পর ওই হিসেব রেজিস্টারে তুলে অফিস বন্ধ করে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। ২২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের প্রতিনিধিরা ওই লকার থেকে টাকা তুলতে গিয়ে সেই টাকার হিসেব পাননি। এরপরই এনিয়ে হইচই শুরু হয়। মহেশ তড়িঘড়ি বক্সিরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এই এমভিআই চেকপোস্টে আলাদাভাবে কোনও ক্যাশিয়ার নেই। মহকুমা শাসক দপ্তর থেকে সাতজন কর্মী পর্যায়ক্রমে সপ্তাহভর এই চেকপোস্টের দায়িত্ব সামলান। তবে প্রতিদিনের কালেকশনের টাকা এখান থেকে ব্যাংকে পাঠানো হয় না। ব্যাংকের প্রতিনিধিরা মাসে এক–দু’বার এখানে এসে টাকা নিয়ে যান। আদায় করা টাকা দিনের পর দিন চেকপোস্টের লকারে পড়ে থাকে।
সেখানে পাঁচ–ছয় কোটি টাকা পড়ে থাকলেও কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। অনেক সময় ছোট লকারে টাকা না ধরলে তা আলমারিতে রাখা হয়।
ক্যাশ সেকশনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও তাতে এক মাসের বেশি ফুটেজ থাকে না। বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা কেন সময়মতো ব্যাংকে জমা দেওয়া হচ্ছে না? কেন ক্যাশ কাউন্টারে পূর্ণ সময়ের একজন ক্যাশিয়ারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না বলে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই এখানকার ক্যাশ সেকশনে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। নজরদারির বাইরে এই লকারে পড়ে থাকা টাকা বাইরে খাটানো হচ্ছে বলে কারও কারও অভিযোগ। তবে এনিয়ে সেভাবে কেউ প্রকাশ্যে সরব হননি। তবে এবারের ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ আরও জোরালো হতে শুরু করেছে। ভালোমতো তদন্ত করলে কেঁচো খঁুড়তে কেউটে বের হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যে ওই চেকপোস্টের ক্যাশ সেকশনে একজন নিরাপত্তারক্ষীর বন্দোবস্ত করেছে। যে সাতজন ক্যাশিয়ার পর্যায়ক্রমে এই ক্যাশ সেকশনের দায়িত্ব সামলান তাঁদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।