তাপস মালাকার, নিশিগঞ্জ: এলাকার জঞ্জাল সাফ করাটাই তাঁর জীবিকা। আর এই কাজে তরণীকান্ত বর্মনের সঙ্গী তাঁর আজব ভ্যান। কয়েকমাস ধরে এক জায়গা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করার পর চলে যান আরেক জায়গায়। এভাবেই এই ব্লক থেকে অন্য ব্লক, এই পঞ্চায়েত থেকে অন্য পঞ্চায়েতে ঘুরে ঘুরে আবর্জনা সংগ্রহ করে সেগুলো পাঠান শিলিগুড়িতে রিসাইকেল করতে। সেখান থেকে তিনি উপার্জন করেন।
এই কাজ করে কত রোজগার হয়? প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে তরণীকান্ত বলেন, ‘সাধারণত ৩০০-৫০০ টাকার মতো আবর্জনা রোজ সংগ্রহ হয়। কোনওদিন ভাগ্য ভালো থাকলে এক হাজার টাকার মতোও আবর্জনা সংগ্রহ করি।’
আগেও তিনি প্লাস্টিক কুড়াতেন। তারপর সেগুলোকে বিক্রি করে তেমন লাভ হত না। বছর তিনেক ধরে তরণীকান্ত নিজের ভ্যানটিকে সাজিয়ে জঞ্জাল সংগ্রহ করছেন। বছরের শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে নির্মল বাংলা বা স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু তরণীকান্তর কাছে প্রতিদিনই জঞ্জাল সাফাই করার দিন। এলাকার মানুষদের ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে নিজের ভ্যানটিকে সাজিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব তরণীকান্ত। বাঁশের টুকরো, ফ্লেক্স, ব্যানার দিয়ে মাথার ওপরের ছাউনি বানিয়েছেন। ব্যবহার করেছেন জাল, প্লাস্টিকের দড়ি। মানুষের অসচেতনতাই তাঁর জীবিকার পুঁজি।
আবর্জনা কেউ ঘরে রাখতে চান না। যা কিছু বাড়তি, বর্জ্য, সেসব ফেলে দেওয়াই দস্তুর। তরণীকান্তর কাছে সেই আবর্জনা উপার্জনের উপায়। সংসারে অভাবের তাড়নাতেই তাঁর এই পেশাগ্রহণ। তরণীকান্তর আসল বাড়ি কোচবিহার-২ (Cooch Behar) ব্লকের মধুপুরে। কিন্তু বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। এক জায়গায় থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করেন না ওই বৃদ্ধ। এখন যেমন মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের প্রেমেরডাঙ্গার ঝাউবাড়ি গ্রামে ডেরা বেঁধেছেন। সেখানে সকাল থেকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের ব্যবহৃত জলের বোতল থেকে অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করে তাঁর ভ্যানে রাখেন। জমা হওয়া বর্জ্য শিলিগুড়িতে রিসাইক্লিংয়ের জন্য পাঠান। সেগুলো বিক্রি করে সংসার চালান। কতদিন পরপর সংগৃহীত আবর্জনা শিলিগুড়িতে পাঠান? জানালেন, রোজকার সংগ্রহ করা জঞ্জাল নিজের বাড়ির কাছে প্রথমে জমা করেন। তারপর এক ট্রাক মতো আবর্জনা জমলে সেগুলো ট্রাকে করে শিলিগুড়িতে পাঠান।
নিশিগঞ্জ-২ (Nishiganj) গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নীরেন রায় সরকার বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণমুক্ত গ্রাম পঞ্চায়েত গড়তে সরকারি প্রচার চালানো হচ্ছে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প চালু হয়েছে। তরণীকান্ত বর্মনের মতো মানুষরা বর্জ্য কুড়িয়ে পরোক্ষভাবে সেই কাজে সহযোগিতা করছেন।’