দিনহাটা: গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করলে এক জায়গায় লক্ষ করা যাবে আশপাশেই রয়েছে সাতটি দিঘি। তবে, একই জায়গায় সাত সাতটি দিঘি কেন? সে নিয়ে কিন্তু অজানাদের মনে প্রশ্ন উঠবেই। এটাই স্বাভাবিক। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলেই উঠে আসে বহু পুরোনো তথ্য। রাজ আমলের স্মৃতিবিজড়িত কোচবিহারের (Cooch Behar) দিনহাটা-১ (Dinhata) ব্লকের ভেটাগুড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঙ্গিজানি গ্রামে কোচবিহার রাজাদের নিদর্শন হিসেবে রয়ে গিয়েছে ওই সাতটি দিঘি। কিন্তু ওই দিঘিগুলি এখন বেহাল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ আমলের স্মৃতিবিজড়িত দিঘিগুলি এখন সমবায় সোসাইটির তত্ত্বাবধানে লিজ নেওয়া হয়েছে। সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
সোসাইটির সম্পাদক দুর্যোধন দাস বলেন, ‘উপার্জনের জন্য ওই দিঘিগুলোতে মাছ চাষ করা হচ্ছে।’
তবে প্রশ্ন উঠছে, রাজ আমলের স্মৃতিবিজড়িত এই দিঘিগুলি বেহাল হয়ে পড়লেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। প্রথম এবং সবচেয়ে বড় দিঘিতে গিয়ে দেখা গেল পাড় ইট দিয়ে বাঁধানো থাকলেও এখন আর তার অস্তিত্ব সেভাবে নেই। দিঘির জল অনেকটাই কমে গিয়েছে। দিঘির মধ্যে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। দিঘিগুলির সঙ্গে কোচবিহার তো অবশ্যই ভেটাগুড়ির বাসিন্দাদের অনেকটাই আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তাই রাজ আমলের ওই দিঘিগুলির সংস্কারের দাবি উঠেছে।
দিঘির পাশে গাছতলায় বসে ছিলেন অনন্ত রায়। স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সাতটি দিঘিকে কোনওদিনও পরিষ্কার করা হয়নি। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি ভেটাগুড়ির সিঙ্গিজানি এলাকায় তৈরি হওয়ার কথা ছিল কোচবিহার রাজ্য। পরবর্তীতে কোনও কারণে অবশ্য সেটা কোচবিহারে চলে যায়।’
কথিত আছে, রাজ আমলে রাতারাতি বিশ্বকর্মা এই দিঘিগুলো খনন করেছিলেন। এক রাতে গ্রামবাসী ঘুমিয়ে পড়ার পর এই দিঘিগুলি খনন করা হয়। সকালে উঠে গ্রামবাসী দেখতে পান গ্রামে সাতটি দিঘি তৈরি হয়েছে। যে দিঘিগুলির নাম দেওয়া হয় সাগরদিঘি। দিঘির পাশেই বসবাসকারী রত্না কিন্নর বলেন, ‘ঠাকুমার মুখে শুনেছি এই দিঘিগুলিকে নিয়ে নানা গল্প। এখন আর কিছু দেখা যায় না। তবে দিঘির আশপাশে বারুণী স্নানের সময় মেলা বসে। তখন কিছু স্মৃতি রোমন্থন করা হয়।’
বাসিন্দারা জানান, ভেটাগুড়ির সেই সাগরদিঘিকেই পরবর্তীতে নিয়ে যাওয়া হয় কোচবিহারে। যা এখন কোচবিহারের সাগরদিঘি নামেই পরিচিত। তবে আসল সাগরদিঘির কথা অনেকেই ভুলে গিয়েছেন। ভোলেননি শুধু সেই গ্রামের বাসিন্দারা। তাই দিঘিগুলিকে সংস্কার করে রাজ আমলের স্মৃতিগুলো বাঁচিয়ে রাখার দাবি রয়েছে তাঁদের। ভেটাগুড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রিয়াংকা দে সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা হয়েছে। দিঘিগুলিকে সংস্কার করে কীভাবে সাজিয়ে তোলা যায় বা অন্য কাজে লাগানো যায় কি না সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’